প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী গাজায় ঢুকে শুধু অভিযান চালিয়ে বেরিয়ে আসবে না—তারা দখল করা এলাকাগুলো ধরে রাখবে এবং সেখানে থেকে যাবে। এর মাধ্যমে গাজা পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
নতুন এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে “গিডিওনের রথ”। ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এই পরিকল্পনা সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করেছে। সেনাবাহিনী এরই মধ্যে কয়েক হাজার রিজার্ভ সেনা ডাকার ঘোষণা দিয়েছে। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হচ্ছে হামাসকে পরাজিত করা এবং সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করা।
নেতানিয়াহু বলেন, “এখানে স্পষ্ট করে বলছি—এটা হবে স্থায়ী নিয়ন্ত্রণের অংশ। আমরা ঢুকে আবার বের হব না, শুধু মাঝে মাঝে অভিযানের জন্য না। এবার যারা আসবে, তারা থাকবে।”
তিনি আরও জানান, “জনগণের নিরাপত্তার জন্য তাদের দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হবে।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে গাজার সাধারণ জনগণকে সংঘাত থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া পরিকল্পনার অংশ।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেছেন, এই অভিযানের “প্রধান লক্ষ্য” হলো জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা। এই বক্তব্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পূর্বের বক্তব্যের পার্থক্য রয়েছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন হামাসকে পরাজিত করাই যুদ্ধের সর্বোচ্চ লক্ষ্য। এই বৈপরীত্যে ইসরায়েলি রাজনৈতিক নেতৃত্বে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়।
জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গেভির সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের সমালোচনা করে বলেন, “সেনাবাহিনী যেন ভুলে না যায় তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীন।”
কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেন, “আমরা এবার গাজা দখল করব। আমরা শুধু দখল করেই থামব না, বরং স্থায়ীভাবে সেখানে থাকব।” তিনি জানান, এমনকি যদি নতুন কোনো জিম্মি মুক্তির চুক্তিও হয়, তবুও দখলকৃত এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সরে আসবে না।
মানবিক সংকট আরও তীব্র হচ্ছে গাজায়। গত ৯ সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল গাজায় কোনো ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেয়নি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি করছে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি নতুন সহায়তা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছে, যেখানে একটি বেসরকারি ফাউন্ডেশন সহায়তা সামগ্রী গাজায় পাঠাবে—হামাসকে বাইপাস করে। তবে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো এই প্রক্রিয়াকে অমানবিক ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
হামাসও এই নতুন সহায়তা কাঠামোকে “রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল” বলে আখ্যা দিয়েছে এবং বলেছে, “মানবিক সাহায্যকে রাজনীতির হাতিয়ার বানানো গ্রহণযোগ্য নয়।”
ইতিমধ্যে গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫২ হাজার ছাড়িয়েছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। প্রতিদিন খাদ্য, পানি ও ওষুধের জন্য মানুষের হাহাকার বাড়ছে।
এই অভিযান কেবল ইসরায়েল-গাজার সংঘর্ষকেই নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকিতে ফেলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে সফর করবেন, যা এই নতুন সামরিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।