বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে হুথি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট

News Desk

বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে হুথি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট. Dhakainlight.com

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়নের দিকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল ব্যর্থভাবে প্রতিহত করায় দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। এই হামলার পর রবিবার সকালে প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য বিমানবন্দরটি বন্ধ রাখা হয়।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করার জন্য দীর্ঘ-পাল্লার অ্যারো ইন্টারসেপ্টর নিক্ষেপ করেছিল, তবে সফল হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মোতায়েনকৃত THAAD ব্যবস্থা থেকেও সহায়তা পাওয়া যায়নি। হুথি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি দাবি করেছেন, তারা “হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল” দিয়ে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং আমেরিকান ও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এটি আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে।

হুথিদের দাবি, এই হামলা গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে হয়েছে এবং তারা আবারও এ ধরনের হামলা চালাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এমনকি ইসরায়েলের উপর পূর্ণাঙ্গ বিমান অবরোধ আরোপের হুমকিও দিয়েছে তারা।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমরা আগেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি, ভবিষ্যতেও জানাব। এটি একবারের বিষয় নয়—এর ধারাবাহিকতা থাকবে।” তিনি ইরানের বিরুদ্ধেও প্রতিশোধের হুমকি দেন, যাদের তিনি হুথিদের “সন্ত্রাসী প্রভু” বলে অভিহিত করেছেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাভৎস প্রতিক্রিয়া হবে “সাতগুণ বেশি শক্তিশালী” বলে সতর্ক করেছেন। অন্যদিকে, ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইরান যদি আক্রান্ত হয়, তবে আমেরিকান ঘাঁটিগুলো তাদের আঘাতের লক্ষ্য হবে।

এই হামলার ফলে তেল আভিভের সঙ্গে বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে এবং আশেপাশের এলাকায় ট্রেন চলাচলও বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দরের পাশে একটি বিস্ফোরণস্থল থেকে কালো ধোঁয়া উড়ছে এবং রাস্তার উপর ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে।

লুফথানসা গ্রুপের অন্তর্গত বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় এয়ারলাইন্স ৬ মে পর্যন্ত তেল আভিভগামী ও আগত ফ্লাইট স্থগিত করেছে।

ইসরায়েলের সামরিক বিশ্লেষক আমির বার শালোম বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি ২,০০০ কিমি দূর থেকে উৎক্ষেপণ করা হলেও অত্যন্ত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছেছে, যা হুথিদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রমাণ দেয়। তিনি বলেন, “এই হুমকি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। আমাদের পর্যালোচনা করতে হবে এটি আমাদের কোনো ব্যর্থতা, না কি নতুন ধরনের হুমকি।”

হুথিদের দাবি, তাদের হাইপারসনিক মিসাইল ২,১৫০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা ম্যাক ১৬ গতিতে চলতে সক্ষম এবং উচ্চ স্তরের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারে।

হামাস এই হামলার প্রশংসা করে হুথিদের “ফিলিস্তিনের যমজ ভাই” বলে আখ্যা দিয়েছে এবং বলেছে, তারা দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটলো যখন ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের দিকে পরপর তিন দিন মিসাইল ছোড়া হয়েছে। পূর্বে প্রায় সব হামলাই ইসরায়েল প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও, কিছু ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছেছে।

এর আগে ডিসেম্বরে হুথিদের একটি মিসাইল তেল আভিভে আঘাত হানে, যেখানে ১২ জন আহত হয়। তখনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়। এছাড়াও গত জুলাইয়ে হুথির ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে প্রাণহানি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইয়েমেনে হুথি অবস্থানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই অভিযান পরিচালনার ব্যয় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তবে এসব পদক্ষেপ হুথিদের রকেট উৎক্ষেপণ সক্ষমতায় দৃশ্যমান প্রভাব ফেলতে পারেনি।

ইসরায়েলের এই সাম্প্রতিক নিরাপত্তা বিভ্রাট দেশটির রকেট প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিশেষ করে যখন হুথিদের মতো গেরিলা গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে বারবার এই ধরনের চ্যালেঞ্জ আসছে।

Leave a Comment

Footer Section