জাতীয় ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে চলমান রাজনৈতিক সংলাপের প্রাথমিক পর্যায় আগামী ১৫ মে’র মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন তাঁদের সহযোগী শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে ঐকমত্য গঠনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেয়।
আজ রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত এক বৈঠকে এই ঘোষণা দেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ১২-দলীয় জোটের ১১ জন নেতা। বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই আলোচনা এককভাবে কমিশনের দায়িত্ব নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে। আমরা যদি বাংলাদেশকে একটি কার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই, তাহলে মৌলিক বিষয়গুলোতে আমাদের ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু যে বিষয়গুলো আমাদের রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়ে তোলে, সেসব জায়গায় আমাদের একমত হওয়া দরকার।’ আলোচনার সময়সীমা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ১৫ মের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শেষ করে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই আলোচনায় প্রাপ্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতেই প্রণীত হবে জাতীয় সনদ।
আলী রীয়াজ স্পষ্ট করে বলেন, ‘শুধু এই টেবিলে বসে আমরা জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব না। আপনাদের যার যার অবস্থান থেকে রাজনৈতিক পরামর্শ দিন, ছাড় দিন এবং সমঝোতার ভিত্তি গড়ে তুলুন। আমরা বিশ্বাস করি, একসঙ্গে কাজ করলে এক জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব।’
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দার। সঞ্চালকের দায়িত্বও তিনিই পালন করেন। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার এবং মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
১২-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেন জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, এবং মুখপাত্র ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা।
এর আগে, গত ২৬ এপ্রিল আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, এই আলোচনা শুধু বক্তব্য বিনিময়ের জন্য নয়, বরং একটি ‘জাতীয় সনদ’ তৈরির উদ্দেশ্যে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ৩ মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলো প্রয়োজনীয় ছাড় দিতে প্রস্তুত থাকবে।
আলোচনা যতই এগোচ্ছে, ততই পরিষ্কার হচ্ছে যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই উদ্যোগ রাষ্ট্র পুনর্গঠনের একটি বড় রূপরেখা হিসেবে কাজ করতে চায়। এখন দেখার বিষয়—রাজনৈতিক দলগুলো কতটা প্রস্তুত ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনে একসাথে পথ হাঁটার জন্য।