থাইল্যান্ডে অবশেষে ৫০ বছর পর শিক্ষার্থীদের চুলের দৈর্ঘ্য নিয়ে কঠোর নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত সম্প্রতি এক রায়ে জানিয়েছে, ১৯৭৫ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সংবিধানবিরোধী এবং এটি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি একটি গুরুতর হস্তক্ষেপ।
বহু দশক ধরে থাই শিক্ষার্থীরা সামরিক আদলের কঠোর পোশাক ও চুল কাটার নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য ছিল। পুরুষদের জন্য ছিল সেনা কাটা চুল আর মেয়েদের জন্য কানের লতির সমান ছোট বব কাট—যা ২০১৩ সালে কিছুটা শিথিল হয়। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে তাদের অধিকারের কথা বলতে শুরু করে, যার চূড়ান্ত রূপ নেয় ২০২0 সালের শিক্ষার্থী বিক্ষোভে।
সেই সময় স্কুলের নিয়ম ভেঙে কেউ সামান্য লম্বা চুল রাখলেও শাস্তি ছিল ভয়াবহ। ব্যাংককের এক স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বারামি চাওয়াওয়ানিচ বা খাও ক্লং-কে শুধুমাত্র কয়েক সেন্টিমিটার চুল বড় রাখার কারণে স্কুলের সামনে মাথার একাংশ কামিয়ে দেওয়া হয়। অপমান, লজ্জা এবং মানসিক যন্ত্রণা এখনো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সে যোগ দেয় “ব্যাড স্টুডেন্টস” নামের একটি শিক্ষার্থী আন্দোলনে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাস্তায় নেমে থাইল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার দাবি তোলে। তারা পুরোনো ইউনিফর্ম খুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গেটে ঝুলিয়ে দেয়, কেউ কেউ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে প্রকাশ্যে চুল কেটে ফেলে, কেউ আবার রংধনু পোশাকে আসে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য।
থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর প্রভাব রয়েছে। ১৯৭৫ সালের চুল কাটার নির্দেশনাও এসেছিল সামরিক শাসনামলে। দেশটিতে নিয়ম মানাকে ‘ভালো মানুষের’ চিহ্ন হিসেবে দেখানো হয়, যার কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা প্রশ্নে প্রশাসনের মনোভাব ছিল বরাবরই কঠোর।
তবে ২০২৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো ঘোষণা দেয় যে, স্কুলগুলোর উচিত শিক্ষার্থীদের শারীরিক স্বাধীনতা সীমিত না করা। এরপর সর্বোচ্চ আদালতের মার্চ ২০২৫ সালের রায়টি এই পরিবর্তনের চূড়ান্ত স্বীকৃতি এনে দেয়। আদালত জানিয়েছে, এই আইন শিশুদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং বিশেষ করে লিঙ্গ বৈচিত্র্যসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ব্যাংককের ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী নিজচয়া ক্রাইসিরিওয়াত্তানা বলেন, আগে সপ্তাহে একবার চুল পরীক্ষা হতো, চুল সামান্য লম্বা হলেই নম্বর কাটা যেত। এখন নিয়মগুলো অনেকটাই ঢিলেঢালা। চুল খোলা রেখে স্কুলে এলেও আর কেউ কিছু বলে না।
তবে অনেকের আশঙ্কা, আদালতের রায় সত্ত্বেও কিছু স্কুল হয়তো আবার পুরনো নিয়ম চালু করতে পারে, যদি সরকার তা পর্যবেক্ষণ না করে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া খাও ক্লং বলেন, “এখন হয়তো আমরা কথা বলি না, তবে মানে এই নয় যে অন্যায় বন্ধ হয়েছে। আমরা শুধু ভুলে গেছি লড়াইটা চালিয়ে যাওয়া দরকার।”
তার আশা, এই রায়ের মাধ্যমে আবার স্কুলগুলোতে অধিকার, স্বাধীনতা এবং কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে আলোচনা শুরু হবে।
থাইল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের এই দীর্ঘ আন্দোলন প্রমাণ করেছে, পরিবর্তন ধীরে হলেও সম্ভব। এবং যে অনুভূতি থেকে তারা একদিন দাঁড়িয়েছিল, তা এখনো তাদের মনে গেঁথে আছে।