দক্ষিণ সুদানের উত্তরের ওল্ড ফ্যাংগাক শহরে একটি হাসপাতালের ওপর ভয়াবহ বোমা হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সেবাদানকারী সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’ (এমএসএফ) এই হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে। এমএসএফের ভাষ্যমতে, এটি ছিল একটি ‘উদ্দেশ্যমূলক হামলা’ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
হামলার ফলে ওল্ড ফ্যাংগাক এলাকার শেষ কার্যকর হাসপাতাল ও চিকিৎসাসামগ্রী সংরক্ষণের কেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে এমএসএফ বলেছে, “বোমা হামলা বন্ধ করুন। বেসামরিক মানুষদের রক্ষা করুন। স্বাস্থ্যসেবা খাতকে সুরক্ষা দিন।”
হাসপাতালের ওপর কেন এই হামলা চালানো হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এমএসএফ জানিয়েছে, অস্ত্রসজ্জিত দুটি হেলিকপ্টার থেকে সরাসরি হাসপাতাল লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছে এবং এরপর গোটা শহরে গুলিবর্ষণ চালানো হয়। দক্ষিণ সুদানে এমএসএফের প্রধান মামান মুস্তাফা বলেন, “ঘটনার সময় আমাদের দল সরাসরি হামলা প্রত্যক্ষ করেছে। ওই হাসপাতালটি ২০১৪ সাল থেকে আমাদের কার্যক্রমের কেন্দ্র ছিল।”
এই হামলার পর স্থানীয় লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে এমএসএফ জানিয়েছে, তারা ‘হতবাক ও শোকাহত’।
ওল্ড ফ্যাংগাক শহরটি জংগলেই রাজ্যের অন্তর্গত, যা মূলত নুয়ের জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত। এটি দীর্ঘদিন ধরে রিয়েক মাশারের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এসপিএলএম-আইও’র ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। হামলার জন্য সরকারি বাহিনীকে দায়ী করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। ফ্যাংগাক কাউন্টির একজন কমিশনার বলেন, “শুধু সরকারি সেনাবাহিনীরই এই ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা রয়েছে।”
হামলার সময়কার বিমানগুলো সরকার পরিচালিত বলেও জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে দক্ষিণ সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই দক্ষিণ সুদানে সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
২০১১ সালে সুদান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ সুদানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জাতিগত সহিংসতা লেগেই আছে। প্রেসিডেন্ট সালভা কির এবং প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাশার—দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতার ফলেই দেশটি বারবার সংঘাতের মুখে পড়ে।
২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ৪ লাখ মানুষ। ২০১৮ সালে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে তারা একটি ঐক্য সরকার গঠন করলেও সাম্প্রতিক সময়ে সেই চুক্তি আবার ভেঙে পড়েছে।
বর্তমানে মাশার গৃহবন্দী রয়েছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা দেশটিকে আবারও পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এমএসএফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এখন দক্ষিণ সুদানে মানবিক সেবা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।