বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত হলো বর্ণিল ও উচ্ছ্বাসে ভরা ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। প্রতি বছরের মতো এবারও হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে রাজধানীর রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে নববর্ষের রঙিন আনন্দ, সংস্কৃতি ও ঐক্যের বার্তা।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে চারুকলা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয় এই ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা। টিএসসি, শাহবাগ মোড়, দোয়েল চত্বর ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে এটি আবার চারুকলা অনুষদে ফিরে এসে শেষ হয়। বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্যসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এবারের শোভাযাত্রার নাম নিয়ে রয়েছে নতুনত্ব। এতদিন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিত এই আয়োজন এবার থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নাম পরিবর্তন নিয়ে নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা হলেও, শোভাযাত্রার আমেজ ও উদ্দীপনায় তার কোনো প্রভাব পড়েনি।
শোভাযাত্রার থিম ও মোটিফগুলোও ছিল এবারের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। শান্তির প্রতীক সাদা কবুতর যেমন ছিল, তেমনি ছিল ‘ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি’—যেখানে তুলে ধরা হয়েছে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাবয়ব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবারের শোভাযাত্রার মূল বার্তা ছিল—‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
চাকমা, মারমা, সাঁওতাল ও গারোসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সরব অংশগ্রহণে উৎসবটি হয়ে ওঠে আরও বেশি বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির জীবনে কেবল একটি দিন নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক। ধর্ম, গোত্র, শ্রেণি বা মত নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে এই উৎসব সত্যিই হয়ে ওঠে একটি সর্বজনীন ও জাতীয় আয়োজনে।
নতুন বছরের এই শুভপ্রভাতে ঢাকার রাস্তায় ছড়িয়ে পড়া রঙ, ঢোল আর মুখোশে ভেসে ওঠে বাঙালির প্রাণের সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা—যা বাংলা নববর্ষকে শুধু উৎসব নয়, একটি প্রতিরোধের ও নবচেতনার দিনেও পরিণত করেছে।
