২০০৭ সালের জুলাইতে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় দীর্ঘ ১৮ বছর। এবার বর্ণাঢ্য পথচলার ইতি টানলেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন তিনি।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের স্বীকৃত পেজে জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। বিদায়ী বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘সকল প্রশংসা একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহর জন্য। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

গত সপ্তাহে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন আরেক অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। সেটার রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে আবার বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর।
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে আগেই অবসর নিয়েছিলেন ৩৯ পেরিয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ। তিনি খেলে যাচ্ছিলেন শুধু ওয়ানডে। এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণ থেকেই অবসর নিলেন তিনি। ফিনিশার খ্যাত এই ক্রিকেটার শেষবার টেস্ট খেলেছিলেন ২০২১ সালের জুলাইতে, দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আর বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ তাকে দেখা গেছে গত বছরের অক্টোবরে, ভারত সফরে।

সদ্যসমাপ্ত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের স্কোয়াডে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। গ্রুপ পর্বে রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ম্যাচটি হয়ে থাকছে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তার সবশেষ স্মৃতি।
অনেকের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মাহমুদউল্লাহ, ‘আমি আমার সকল সতীর্থ, কোচ এবং বিশেষ করে, আমার ভক্তদের ধন্যবাদ জানাতে চাই ,যারা সব সময় আমাকে সমর্থন করেছেন। আমার বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, বিশেষ করে, আমার শ্বশুর এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে আমার ভাই এমদাদ উল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ, যিনি ছোটবেলা থেকেই আমার কোচ ও পরামর্শদাতা হিসেবে পাশে থেকেছেন। আর সবশেষে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের ধন্যবাদ, যারা কঠিন সময়ে আমার পাশে থেকেছেন। আমি জানি লাল-সবুজ জার্সিতে রায়েদ (সন্তান) আমাকে মিস করবে।’

৫০টি টেস্টে ৩৩.৪৯ গড়ে মাহমুদউল্লাহর রান ২৯১৪। পাঁচটি সেঞ্চুরির সঙ্গে ১৬টি ফিফটি রয়েছে তার। ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলীন সংস্করণে ৪৫.৫৩ গড়ে তিনি উইকেট নিয়েছেন ৪৩টি। ২৩৯টি ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে ৩৬.৪৬ গড়ে ৫৬৮৯ রান করেছেন তিনি। পেয়েছেন চারটি সেঞ্চুরি ও ৩২টি হাফসেঞ্চুরি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বল হাতে মাহমুদউল্লাহ ৪৬.৪৫ গড়ে শিকার করেছেন ৮২টি উইকেট। ১৪১টি টি-টোয়েন্টিতে আটটি ফিফটসহ ২৩.৫০ গড়ে তার রান ২৪৪৪। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণে ২৭.৩৮ গড়ে তিনি পেয়েছেন ৪১টি উইকেট।

মাহমুদউল্লাহর সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে কিছুটা আক্ষেপও মিশে থেকেছে, ‘সবকিছু নিখুঁতভাবে শেষ হয় না, তবে আপনাকে সেটা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। শান্তি… আলহামদুলিল্লাহ। আমার দল ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুভকামনা।’
গত সোমবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন মাহমুদউল্লাহ। তাকে রাখা হয়েছিল ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। তখন থেকেই গুঞ্জন ছিল, ২২ গজ থেকে বিদায় নিতে পারেন তিনি। শেষমেশ সেটাই সত্যি হলো।