স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আবরার ফাহাদ শুধু একটা নাম নয়, আবরার ফাহাদ আমাদের আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ের একটা জার্নি। এবং সেই জার্নির একটা অন্যতম অর্জন হচ্ছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান।’ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়ায় শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে এ দেশের তরুণেরা জীবন দেওয়ার প্রেরণা পেয়েছে আবরার ফাহাদ থেকে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আগ্রাসন থেকে মুক্তির জন্য এ দেশের তরুণেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজপথে। এবং অবশেষে আমরা আগ্রাসী পরাশক্তির বাংলাদেশীয় সবচেয়ে বড় খুঁটি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য করতে সক্ষম হয়েছি।’
আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার দিনের স্মৃতি স্মরণ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আবরার ফাহাদ ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে ২০১৯ সালে বুয়েটে ছাত্রলীগের অকথ্য নির্যাতনে শহীদ হন। তাঁর শাহাদাতের পর সেদিন সকালে যখন আমাদের কাছে খবরটা পৌঁছায়, তখন থমথমে পরিবেশে কোনো কিছু না ভেবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করি। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে সবাই বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘ মিছিলে অংশগ্রহণ করি। তারপর খুনিদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকে।’
আগ্রাসনবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ে আবরার ফাহাদ অন্যতম একটা নতুন ধাপ সংযোজন করে দিয়ে গেছেন জানিয়ে আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘সেই লড়াইটাকে আবরার ফাহাদকে সামনে রেখে চালু রাখতে চেয়েছি। প্রতিবছর ৭ অক্টোবর সেই দিনটিকে স্মরণ করতে চেয়েছি। আবরার ফাহাদের তৃতীয় শাহাদাতবার্ষিকীতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণসভার আয়োজন করেছিলাম। সেখানে ছাত্রলীগ হামলা করে। আহত অবস্থায় আমিসহ ২৪ জন সহযোদ্ধাকে থানায় সোর্পদ করে। দীর্ঘদিন আমিসহ ২৪ জন জেলে ছিলাম।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ এবং আহত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে, আগ্রাসনবিরোধী সংগ্রামে আবরার ফাহাদসহ আরও যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের যেন এই বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আজন্ম মনে রাখেন, সে জন্য এই কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামের নাম আবরার ফাহাদের নামে করা হয়েছে। সারা দেশে আরও যত স্থাপনা আছে, সেখানে আত্মত্যাগকারী সেই বীর শহীদদের স্মরণ করার জন্য, সেগুলোও তাঁদের নামে নামকরণ করব।’
ফ্যাসিবাদী সরকার আবরার ফাহাদের স্মৃতিকে মুছে দিতে চেয়েছিল মন্তব্য করে বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘তারা আবরার ফাহাদকে নিয়ে কোনো নিউজ করতে দিতো না। কোনো কর্মসূচি পালন করতে দিত না। কর্মসূচি পালন করতে গেলে সেখানে হামলা হতো। জেল–জুলুমের স্বীকার হতে হতো। কিন্তু যাঁরা আত্মত্যাগ করেন, তাঁদের নাম কখনোই মুছে দেওয়া যায় না। এটি আবারও প্রমাণিত হলো। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর এখন বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ আবরার ফাহাদকে স্মরণ করে। আগ্রাসনবিরোধী প্রতিটি লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকেন শহীদ আবরার ফাহাদ।’
এখনো যড়যন্ত্র চলমান জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘নানা ছোটখাটো ইস্যুতে জনগণকে বিভক্ত করার একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার যড়যন্ত্র করে যাচ্ছে পরাজিত শক্তি। নানা ধরনের উগ্রবাদীদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ ধরনের যেকোনো চেষ্টাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে। সেই প্রক্রিয়ায় জনগণের সার্বিক অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা কামনা করি।’
এর আগে দুপুর ১২টায় আসিফ মাহমুদের উপস্থিতিতে শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন। এ সময় সেখানে আবরারের মা রোকেয়া খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জায়েদী, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব (যুগ্ম সচিব) আমিনুল ইসলাম, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে বেলা ১১টায় কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নে রায়ডাঙ্গা গ্রামে আবরার ফাহাদের নামে মসজিদের সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেন আসিফ মাহমুদ। এ সময় তিনি আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন।