জার্মানির মেসেল পিট থেকে পাওয়া গেছে একটি অবিশ্বাস্যভাবে সংরক্ষিত সিসাডা বা গুবরেপোকা জীবাশ্ম, যার বয়স প্রায় ৪৭ মিলিয়ন বছর। মাত্র ২৬.৫ মিলিমিটার লম্বা এই স্ত্রী সিসাডাটি ছিল একেবারে সুস্পষ্ট অবস্থায় সংরক্ষিত, যার পাখার শিরা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।
গবেষকরা এই জীবাশ্ম এবং আরও একটি প্রায় সমানভাবে সংরক্ষিত জীবাশ্মের ভিত্তিতে নতুন একটি গণ (genus) এবং প্রজাতি হিসেবে এটি চিহ্নিত করেছেন। যদিও জীবাশ্ম দুটি স্ত্রী সিসাডার, তবুও এদের গঠন ও অবস্থান অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, পুরুষরা আধুনিক সিসাডাদের মতোই গান গাইত।
এটি ইউরোপে সন্ধান পাওয়া সবচেয়ে পুরনো “সত্যিকারের” গান গাওয়া সিসাডা (Cicadidae পরিবারের) জীবাশ্ম, যা গবেষকরা ২৯ এপ্রিল Scientific Reports জার্নালে প্রকাশ করেছেন। এই পরিবারেই পড়ে সেই বিখ্যাত বার্ষিক ও পর্যায়ক্রমিক সিসাডাগুলো, যারা গ্রীষ্মে গাছের গায়ে বসে কানফাটা শব্দ তোলে। আমেরিকার ১৩ ও ১৭ বছরের পর্যায়ক্রমিক সিসাডার ভিন্ন ভিন্ন ঝাঁক, যেমন Brood XIV, ২০২৫ সালের এই বসন্তে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে একযোগে উঠবে।
বিশ্বজুড়ে ৩০০০টিরও বেশি সিসাডা প্রজাতি থাকলেও এদের জীবাশ্ম রেকর্ড খুবই কম। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৪টি Cicadidae জীবাশ্ম চিহ্নিত হয়েছে। এই নতুন জীবাশ্মটি ইউরোপে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম গান গাওয়া সিসাডা হিসেবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এই সিসাডাটিকে Platypleurini ট্রাইবের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যা বর্তমানে আফ্রিকা ও এশিয়ার গরম ও আর্দ্র অঞ্চলে প্রচলিত, কিন্তু ইউরোপে নেই। আগের গবেষণায় ধারণা ছিল এই ট্রাইবটি প্রায় ২৫-৩০ মিলিয়ন বছর আগে আফ্রিকায় উদ্ভূত হয়। কিন্তু এই জীবাশ্মের আবিষ্কার দেখাচ্ছে, তারা আরও প্রায় ২০ মিলিয়ন বছর আগে থেকেই অস্তিত্বে ছিল।
নতুন প্রজাতিটির নাম রাখা হয়েছে Eoplatypleura messelensis, যার নাম এসেছে জার্মানির মেসেল পিট থেকে। এই অঞ্চলটি এক সময় একটি গভীর আগ্নেয় হ্রদ ছিল, যার তলদেশে অক্সিজেনের অনুপস্থিতি জীবাশ্ম সংরক্ষণের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছিল। আজ এটি UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
Eoplatypleura messelensis দেখতে আধুনিক সিসাডাদের মতোই। এর মুখের রোস্ট্রাম (শুঁড়ের মতো গঠন) অক্ষত রয়েছে, যা দিয়ে এটি গাছের রস (xylem) খেত কিনা, তা আরও গবেষণার বিষয়। পাখার ছায়াছবি বা প্যাটার্ন দেখা গেছে, যা আধুনিক সিসাডাদের মতো গাছের গায়ে মিশে যেতে সাহায্য করতে পারত।
তবে কিছু পার্থক্যও রয়েছে। এর সামনের পাখা আধুনিক প্রজাতির তুলনায় কিছুটা চওড়া এবং কম লম্বা, যা এর উড়ন্ত ভঙ্গিতে প্রভাব ফেলতে পারত।
এই সিসাডার গলার স্বর কেমন ছিল, তা সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়। তবে গবেষকদের ধারণা, আধুনিক সিসাডাদের মতোই এটি শব্দ করত। তারচেয়ে বড় কথা, এর পেটের আকৃতি আরও বড় হওয়ায়, পুরুষদের গায়ে শব্দ বাড়ানোর বড় রেজোনেটিং ক্যাভিটি থাকতে পারে, যা হয়তো আধুনিক সিসাডাদের থেকেও জোরে শব্দ তুলতে পারত।
বর্তমানে কিছু আফ্রিকান সিসাডার শব্দের মাত্রা ১০৭ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছায়, যা একটি জেট বিমানের শব্দের সমান। নতুন আবিষ্কৃত এই প্রজাতিটি হয়তো আরও উচ্চস্বরে গান গাইতে পারত। যদিও এটি এখনো একটি অনুমান, ভবিষ্যতে সিসাডার দেহ গঠন ও শব্দ উৎপাদনের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা এই অনুমানকে আরও স্পষ্ট করতে পারে।
এই চমকপ্রদ আবিষ্কার কেবল একটি নতুন প্রজাতিকে চিহ্নিত করল না, বরং সিসাডাদের বিবর্তনের ইতিহাসকে অনেকটাই পিছিয়ে নিয়ে গেল এবং ভবিষ্যতের আরও অনুসন্ধানের দ্বার খুলে দিল।
4o