হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-কার্নির বৈঠকে উত্তাপ না থাকলেও হৃদ্যতাও অনুপস্থিত

News Desk

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-কার্নির বৈঠকে উত্তাপ না থাকলেও হৃদ্যতাও অনুপস্থিত. Dhakainlight.com

ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির প্রথম মুখোমুখি বৈঠকটি উত্তপ্ত না হলেও বন্ধুত্বপূর্ণও বলা যাবে না। বৈঠকটি ছিল মাঝামাঝি ধরনের—না একেবারে সংঘাতপূর্ণ, না-ই খুবই সহযোগিতাপূর্ণ। প্রতিবেশী দুই দেশের এই বৈঠকে ‘নরম অথচ স্পষ্ট অবস্থান’ বজায় রেখেছেন দুই নেতা।

বৈঠকে ট্রাম্পের এক মন্তব্যে প্রথমেই দৃষ্টিগোচর হয় দুই নেতার পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য। ট্রাম্প বলেন, “কেউ একসময় একটা সরল রেখা টেনে এ সীমান্ত এঁকে দিয়েছে। আমি বলি, এটাই তো সঠিক ছিল।” কার্নির প্রতিক্রিয়া ছিল ঠাণ্ডা, “ভালো হয়েছে যে আপনি তখন আমার ভাবনাগুলো দেখতে পারেননি।”

প্রায় পুরো বৈঠজুড়েই ট্রাম্প কথা বলেছেন, নানা বিষয়ে—মধ্যপ্রাচ্য, ওবামার প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি, ক্যালিফোর্নিয়ার হাই-স্পিড রেল প্রজেক্ট। তবে আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসে যখন ট্রাম্প কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কার্নি কৌশলী কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেন প্রস্তাবটি, “রিয়েল এস্টেটে যেমন কিছু জায়গা বিক্রির জন্য না, এটাও তেমনই। কানাডা বিক্রির জন্য নয়, কখনোই হবে না।”

তিনি আরও বলেন, “কানাডার মালিকদের সাথে আমি দীর্ঘদিন ধরেই কথা বলেছি, তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—এ দেশ বিক্রি হবে না।”

এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই কার্নি মূলত তাঁর প্রধান বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছেন, যা তিনি নির্বাচনী প্রচার থেকেই বলে আসছিলেন। এমনকি হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগে তিনি কানাডার সার্বভৌমত্বের বার্তা পৌঁছাতে রাজা চার্লসের আগত সফরের ঘোষণাও দেন।

বৈঠকে ট্রাম্প অবশ্য এই বক্তব্যে চূড়ান্ত আপত্তি জানাননি। বরং বলেন, “কখনো না বলো না। অনেক কিছুই আমি করেছি যেগুলো শুরুতে অসম্ভব ছিল।”

কার্নি অবশ্য পরে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ট্রাম্পকে বলেছেন, “এই ধরনের কথা বলা কোনোভাবেই সহায়ক নয়।” তবে ট্রাম্পের বক্তব্য প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “তিনি প্রেসিডেন্ট, তিনি যা খুশি বলতেই পারেন।”

বৈঠক শেষে ট্রাম্প অবশ্য আগের মতো কার্নিকে ‘গভর্নর কার্নি’ বলে অপমান করেননি। বলেন, “এখনও বলিনি, হয়তো বলব না।”

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। ট্রাম্প জানান, তিনি কানাডার গাড়ি বা স্টিল চান না এবং কোনোভাবেই শুল্ক তুলে নেওয়া হবে না। “এটাই বাস্তবতা,” বলেন তিনি।

কার্নি জানিয়েছেন, আগামী মাসে আলবার্টায় অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ সম্মেলনে দুজনের আবার দেখা হবে।

বৈঠক যতই কৌশলী হোক, ওয়াশিংটন ও অটোয়ার সম্পর্কে বর্তমানে যে শীতলতা বিরাজ করছে, তা স্পষ্ট। এমনকি বৈঠকের আগে ট্রাম্প Truth Social-এ পোস্ট দিয়ে কানাডাকে “আমাদের কিছুই দরকার নেই, কিন্তু ওরা আমাদের সবকিছু চায়”—এই ভাষায় আক্রমণ করেন।

বৈঠকের শেষ পর্যন্ত উত্তেজনা না বাড়লেও ভবিষ্যতের পথচলা যে সহজ হবে না, সেটাই হয়তো স্পষ্ট হয়েছে দুই নেতার এই প্রথম সাক্ষাতে।

Leave a Comment

Footer Section