হেগে আটক রোদ্রিগো দুতের্তে, তবুও দাভাও শহরের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পথে

News Desk

হেগে আটক রোদ্রিগো দুতের্তে, তবুও দাভাও শহরের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পথে. Dhakainlight.com

ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাভাওতে চলছে প্রাণবন্ত একটি মেয়র নির্বাচন। শহরের অলিগলি জুড়ে প্রার্থীদের প্রচার, মিছিল আর পোস্টারে জমে উঠেছে উৎসবের আবহ। কিন্তু এই নির্বাচনের শীর্ষ প্রার্থী রোদ্রিগো দুতের্তে নিজেই নেই মাঠে। তিনি আছেন নেদারল্যান্ডসের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) এর হেফাজতে।

প্রাক্তন ফিলিপাইন প্রেসিডেন্ট রোদ্রিগো দুতের্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বর্তমানে হেগে বিচার প্রত্যাশায় আছেন। তাঁর শাসনামলে পরিচালিত জিরো টলারেন্স মাদক যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হন—যাদের অনেকে ছিলেন নিরপরাধ বা সাধারণ পথচারী। অথচ এসব কিছুই তাঁকে মেয়র পদে প্রার্থী হতে বাধা দেয়নি। ফিলিপাইনের নির্বাচনী আইনে শুধুমাত্র দেশীয় আদালতের অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তবেই প্রার্থী অযোগ্য বলে বিবেচিত হন।

৮০ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দীর্ঘ দুই দশক দাভাওয়ের মেয়র ছিলেন। অনেকের চোখে তিনি এই শহরে কঠোর শাসনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন। ফলে তাঁর জনপ্রিয়তা এখনো অমলিন। অনেক ভোটার এখনো মনে করেন, শহরের নিরাপত্তা, অবকাঠামো ও শৃঙ্খলার জন্য দুতের্তে ছিলেন অপরিহার্য।

স্থানীয় এক বাসিন্দা ইয়ান বলডোজা জানান, “ছোটবেলায় দাভাওতে ছিল খুনোখুনি আর আতঙ্ক। কিন্তু দুতের্তের শাসনে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।” যদিও তিনি স্বীকার করেন, তাঁর আশপাশে বেশ কয়েকজন প্রতিবেশীই দুতের্তের মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছেন।

দাভাও ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্লেভ আরগুয়েলেস বলেন, “আইসিসি-তে আটক থাকা দুতের্তের জনপ্রিয়তায় কোনো প্রভাব ফেলছে না বরং তাঁর কঠোর ভাবমূর্তিকেই আরও জোরালো করছে।”

দুতের্তে এই নির্বাচন নিয়ে এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে তাঁর কন্যা, ফিলিপাইন ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তে, এক নির্বাচনী সমাবেশে বাবার পক্ষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “রোদ্রিগো দুতের্তে আপনাদের ভালোবাসা, প্রার্থনা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি তিনি শিগগিরই দেশে ফিরে আসবেন।”

এই নির্বাচন ঘিরে দাভাওয়ে তিন প্রজন্মের দুতের্তে পরিবার সক্রিয়। রোদ্রিগোর ছেলে সেবাস্তিয়ান বর্তমান মেয়র এবং তাঁর সহপ্রার্থী। আরেক ছেলে পাওলো জাতীয় কংগ্রেসে পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়ছেন। এমনকি পাওলোর দুই সন্তান স্থানীয় কাউন্সিলের প্রার্থী।

তবে দুতের্তে পরিবারেও এখন ধসের ইঙ্গিত। ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মারকোস জুনিয়রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অভিশংসনের ডাক উঠেছে, যদিও তিনি তা অস্বীকার করছেন।

এদিকে নোগরালেস পরিবার, যারা এক সময় জাতীয় রাজনীতির শীর্ষে ছিল, তারা এখন দুতের্তেদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। কার্লো নোগরালেস মেয়র পদে রোদ্রিগোর প্রতিদ্বন্দ্বী, আর তাঁর বোন মার্গারিটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাওলো দুতের্তের বিরুদ্ধে।

দুতের্তের অনুপস্থিতিতে বিরোধী শিবির আবার সক্রিয় হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রামন বেলেনো মনে করেন, “জনগণ যতদিন পর্যন্ত মনে করে যে দুতের্তে পরিবার কার্যকর, ততদিন তারা সমর্থন পাবে। কিন্তু প্রবীণ দুতের্তের শারীরিক দুর্বলতা ও অনুপস্থিতি রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলছে।”

আইন অনুযায়ী, রোদ্রিগো দুতের্তে নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি প্রক্সির মাধ্যমে বা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে শপথ নিতে পারেন, যদি আইসিসি অনুমতি দেয়। না দিলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রার্থী কার্লো নোগরালেস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।

প্রসঙ্গত, দুতের্তে ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ফিলিপাইন শাসন করেন। তাঁর মাদকবিরোধী যুদ্ধ ছিল ভয়াবহ। পুলিশের দাবি, এই অভিযানে ৬ হাজার মানুষ নিহত হয়। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসেব অনুযায়ী এই সংখ্যা ৩০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।

আইসিসি দুতের্তের বিরুদ্ধে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Leave a Comment

Footer Section