হাতি হত্যায় মামলা নয়, দায় সারে জিডিতে বন বিভাগ

News Desk

হাতি হত্যায় মামলা নয়, দায় সারে জিডিতে বন বিভাগ

গত ৯ বছরে বাংলাদেশে ১৪৬টি বন্য হাতি হত্যার ঘটনা ঘটলেও বন বিভাগ মাত্র ২০টি মামলার মাধ্যমে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন কর্মকর্তারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে দায় সারে, যদিও বন্য প্রাণী আইনে তাদের সরাসরি মামলা করার ক্ষমতা রয়েছে।

চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ১১৪টি হাতি হত্যা হয়েছে। অথচ এসব ঘটনার মধ্যে বন আদালতে মামলার সংখ্যা মাত্র ১৯টি এবং জিডি হয়েছে ৭৫টি। অন্যদিকে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুরে ৩২টি হাতি মারা গেলেও মামলার সংখ্যা নিতান্তই কম—মোট ২টি।

২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের ৩৬ ধারায় বলা হয়েছে, তফসিল-১ ভুক্ত প্রাণী (যেমন হাতি, বাঘ) হত্যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সর্বনিম্ন ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদণ্ড এবং ১০-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এসব বিধান কার্যকর করা হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন অধিদপ্তরের তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত বন কর্মকর্তা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করেন। অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে মামলা দায়েরকারী কর্মকর্তাই আইনের আওতায় পড়েন। এতে অনিচ্ছা আরও বাড়ে।

হাতি হত্যার পেছনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো বিদ্যুতের ফাঁদ ও গুলি। শুধুমাত্র ২০১৯-২০২২ সালের মধ্যে কক্সবাজারে ১৮টি হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে সংবাদপত্রের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। অথচ সরকারি তথ্যে এই সংখ্যা অনেক কম দেখানো হয়।

চলতি বছরের ২১ মার্চ শেরপুরের মধুটিলা এলাকায় একটি হাতি বিদ্যুতের ফাঁদে মারা যায়। আসামির নাম-ঠিকানা জানা সত্ত্বেও বন বিভাগ বন আদালতে না গিয়ে থানায় মামলা করে।

নালিতাবাড়ী থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “আমরা আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তবে মামলাটি করেছে বন বিভাগ।”

পরিবেশবিদদের অভিযোগ, হাতি হত্যার ঘটনায় বন বিভাগ ইচ্ছাকৃতভাবে বার্ধক্য বা অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে প্রকৃত তথ্য গোপন করে। ফলে অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে যায়।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, “হাতির প্রাকৃতিক চলাচলের পথগুলো দখল হয়ে গেছে। যখন হাতি সেই করিডরে প্রবেশ করে, তখন অবৈধ দখলদাররা হাতিকে উপদ্রব মনে করে এবং ফাঁদ পেতে হত্যা করে।”

Leave a Comment

Footer Section