হাওরে এবার নির্বিঘ্নে ধান উঠেছে, বিশেষ প্রার্থনার সঙ্গে থাকছে আনন্দ আয়োজন

News Desk

হাওরে এবার নির্বিঘ্নে ধান উঠেছে, বিশেষ প্রার্থনার সঙ্গে থাকছে আনন্দ আয়োজন. Dhakainlight.com

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এবারের বোরো মৌসুমে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অকাল বন্যা না হওয়ায় কৃষকরা নির্বিঘ্নে ধান কাটতে সক্ষম হয়েছেন। সঠিক আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে বোরো ধান কাটা, মাড়াই এবং গোলায় তোলার কাজগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কৃষকেরা এবার সোনার ধান পেয়েছেন, ফলে তাঁদের আনন্দের সীমা নেই।

এ উপলক্ষে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সব মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া প্রকাশ করা হবে। এছাড়া আগামী মঙ্গলবার তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে কৃষকদের জন্য আনন্দ আয়োজন করা হবে, যেখানে তাঁদের মিষ্টি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।

এ বছর সুনামগঞ্জের হাওরে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদিত হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল জানিয়েছেন, এবারের মৌসুমে প্রকৃতি কৃষকদের প্রতি সদয় ছিল। সুতরাং, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আজ জুমার নামাজের পর বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনার আয়োজন করবে।

সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ধান কৃষক পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষক পরিবারের এক বছরের খাদ্য, সন্তানের পড়াশোনা, বিয়েশাদি এবং বিভিন্ন খরচ এই ধান দিয়ে চলে। তাই যখন ধান গোলায় ওঠে, তখন কৃষক পরিবারে পুরো বছর আনন্দ থাকে। কিন্তু কোনো কারণে যদি ধান না ওঠে, তবে তাদের কষ্টের শেষ থাকে না।

এবার সুনামগঞ্জে ১৩৭টি ছোট-বড় হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী হাওরে ধান কাটা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপরই হাওরে ধান কাটা শুরু হয়, যদিও ১৫-২১ এপ্রিল ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় কৃষকরা উদ্বেগে পড়েছিলেন। তবে শেষমেশ বৃষ্টি হয়নি এবং জমির রক্ষা হয়েছে।

হাওরের জমি দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, ‘হাওর’ (নিচু এলাকা) এবং ‘নন–হাওর’ (উঁচু এলাকা)। এবারের মৌসুমে ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে, যেখানে ৫৮ হাজার হেক্টর জমি নন-হাওরে। হাওরের ধান কাটা ৩০ এপ্রিল শেষ হয়, আর নন-হাওরে ৫ মে পর্যন্ত ধান কাটা চলতে থাকে।

এবার সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে ৫০টি হাওরে ৬৮৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৯৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ করা হয়েছে। এর জন্য প্রাক্কলন ব্যয় ছিল ১২৮ কোটি টাকা, যা কৃষকদের জন্য এক বড় সুরক্ষা প্রদান করেছে।

Leave a Comment

Footer Section