অস্কারজয়ী মার্কিন অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান মারা গেছেন। হ্যাকম্যানের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়ার মৃত্যুর খবর জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফের বাড়িতে হ্যাকম্যান ও আরাকাওয়ার মৃতদেহ পাওয়া যায়। তবে তাঁদের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। সান্তা ফের শেরিফ অ্যাডান মেনডোজা ভ্যারাইটিকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে ঘটনাস্থলে কোনো অপরাধের আলামত পাওয়া যায়নি। দুবারের অস্কারজয়ী অভিনেতা হ্যাকম্যানের বয়স হয়েছিল ৯৫। তাঁর স্ত্রী আরাকাওয়ার বয়স হয়েছিল ৬৩, তিনি সুপরিচিত ক্ল্যাসিক্যাল পিয়ানোবাদক ছিলেন। অনেক গণমাধ্যমে হ্যাকম্যান, আরাকাওয়ার সঙ্গে তাঁদের কুকুরের মৃত্যুর খবরও এসেছে। স্থানীয় সংবাদপত্র সান্তা ফে নিউ মেক্সিকানকে শেরিফ বলেন, ‘আমরা একটা প্রাথমিক তদন্তের মাঝপথে আছি। এখন আমরা সার্চ ওয়ারেন্টের অপেক্ষায় আছি। তবে প্রতিবেশীদের এটা বলে আশ্বস্ত করতে চাই, এখানে কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই।’ হ্যাকম্যানকে গত শতকের সেরা অভিনেতাদের একজন মনে করা হয়। রবার্ট ডি নিরো, আল পাচিনো, ডাস্টিন হফম্যানের সঙ্গে তিনি হলিউডের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া তারকার একজন ছিলেন।
হ্যাকম্যান ১৯৩০ সালের ৩০ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্দিনো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। নানা শহর ঘুরে তাঁদের পরিবার ইলিনয়ের ড্যানভিলে স্থায়ী হয়। হ্যাকম্যান ছোটবেলাতেই ঠিক করেছিলেন অভিনেতা হবেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনা প্লেহাউসে যোগ দেন, সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় ডাস্টিন হফম্যানের। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মঞ্চ আর টিভিতে প্রচুর কাজ করেন হ্যাকম্যান। তবে তখনো তিনি তারকা হয়ে ওঠেননি।
হ্যাকম্যানের প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ওয়ারেন বেটির ‘লিলিথ’, ১৯৬৭ সালে আর্থার পেনের ‘বনি অ্যান ক্লাইড’ দিয়ে পার্শ্বচরিত্রে প্রথমবার অস্কার মনোনয়ন পান। ১৯৭০ সালে ‘আই নেভার স্যাং ফর মাই ফাদার’ চলচ্চিত্রের জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে দ্বিতীয়বার অস্কার মনোনয়ন পান। এরপরই আসে সেই বিখ্যাত সিনেমা ‘দ্য ফ্রেঞ্চ কানেকশন’। ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া জিমি পপাই ডয়েল চরিত্রে অভিনয় করে দুনিয়াজুড়ে খ্যাতি পান। উইলিয়াম ফ্রিডকিনের সিনেমাটির জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার পান।
হ্যাকম্যান ১৯৯২ সালে ক্লিন্ট ইস্টউডের ‘আনফরগিভেন’ চলচ্চিত্রে শেরিফ লিটল বিল ড্যাগেট চরিত্রে অভিনয় করেন। এই সিনেমার জন্য পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতা হিসেবে আবার অস্কার পান।
হ্যাকম্যানের অন্য উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আছে ‘মিসিসিপি বার্নি’, ‘আ ব্রিজ টু ফার’, ‘এনিমি অব দ্য স্টেট’, ‘বিহাইন্ড এনিমি লাইনস’ ইত্যাদি।
২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য মেক্সিকান’ সিনেমায় অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন হ্যাকম্যান। এটিই হওয়ার কথা ছিল তাঁর অভিনীত শেষ সিনেমা। কিন্তু পরে ২০০৪ সালে ‘ওয়েলকাম টু মুজপোর্ট’ সিনেমায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এটিই তাঁর করা শেষ চরিত্র। অভিনয় থেকে অবসর নিয়ে লেখালেখিতে মন দেন হ্যাকম্যান। ২০০৮ সালে তৃতীয় উপন্যাস প্রকাশের সময় আবারও অভিনয় থেকে অবসরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২০১১ সালে জিকিউ সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হ্যাকম্যান আবারও নিশ্চিত করেন, তিনি আর কখনোই অবসর ভেঙে ফিরবেন না। যদিও ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দুটি তথ্যচিত্রের প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।