স্কুলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষকের অপমান, চেয়ার ঝুলছে আমগাছে

News Desk

স্কুলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষকের অপমান, চেয়ার ঝুলছে আমগাছে. Dhakainlight.com

রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা আর তাঁর চেয়ার ঝুলছে পাশের আমগাছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চোখের সামনে এমন অপমানজনক ও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ চিত্র দেখা যায়।

প্রধান শিক্ষক মোসা. মঞ্জু মনোয়ারা অভিযোগ করেছেন, গত মঙ্গলবার বিএনপির দুটি পক্ষের বিরোধের জেরে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। মারধর করা হয় তাঁকে, অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বসার চেয়ার পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়, পরে সেটি কে বা কারা বিদ্যালয়ের পাশের একটি আমগাছে ঝুলিয়ে রাখে।

তিনি বলেন, ‘আজ সকালে যখন বিদ্যালয়ে আসি, দেখি তালা এখনো দেওয়া। নৈশপ্রহরী জানান, ভোর থেকেই চেয়ারটি আমগাছে ঝুলছে। কেউ বার্তা দিতে চাইছে বুঝতে পারছি, কিন্তু আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত আগেই ঘটে। স্থানীয় বিএনপির দুটি পক্ষ—একটি পৌরসভা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ, অন্যটি সাবেক সভাপতি শেখ মো. মকবুল হোসেনের অনুসারী। বর্তমান কমিটির সভাপতি মামুন-অর-রশিদ রফিকুল ইসলামের শ্যালক। এই নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে।

গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে কমিটির সভা ডাকা হয়েছিল। সভায় রফিকুল ইসলামের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি শেষ পর্যন্ত যাননি। তবে সভাস্থলে তাঁর পক্ষের লোকজন উপস্থিত হয় এবং তখনই উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি ও লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে।

পৌরসভা বিএনপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, তিনি সেখানে গিয়েছিলেন শুধু সংবর্ধনার জন্য। কারও ওপর আক্রমণ বা ভাঙচুরের ঘটনায় তিনি জড়িত নন। তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন বাইরের কাউকে স্কুলের সভাপতি করা হলো।

রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি নিজে না গেলেও তার নামের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘কমিটিতে মতানৈক্য থাকতেই পারে, কিন্তু তা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার কারণ হতে পারে না।’ তিনি দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।

স্কুলের শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্র হতে পারে না। তারা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—একজন প্রধান শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষায় রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা কোথায়?

Leave a Comment

Footer Section