: বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ
সাতক্ষীরার সুন্দরবন সীমান্ত ঘেঁষা নদীপথ দিয়ে অন্তত ৬২ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ—এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বন বিভাগ এবং বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে অবহিত করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (৯ মে) বিকেল তিনটার দিকে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মান্দারবাড়ীয়া সীমান্ত এলাকার নদীপথ দিয়ে এই ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ও নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জ সহকারী এবিএম হাবিবুল ইসলাম জানান, “সন্দেহভাজন অনুপ্রবেশকারী ৬০ থেকে ৬২ জন ভারতীয় নাগরিককে আমরা মান্দারবাড়ীয়া টহল ফাঁড়িতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তারা জানিয়েছেন, ভারতীয় বিএসএফ তাদের জোরপূর্বক সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে।”
এই অভিযোগ আরও ঘনীভূত হয় যখন অনুপ্রবেশকারীরা জানান, আরও কিছু ভারতীয় নাগরিককে বিএসএফ বনের ভেতরেই ফেলে রেখে গেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিস্তারিত জানিয়ে দিয়েছে।
সুন্দরবন সীমান্তবর্তী অঞ্চলের এই পুশ-ইন ঘটনাটি একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে—কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পাঠানো হলো? তারা কি আদৌ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, নাকি রাজনৈতিক বা মানবিক কারণে ঠেলে দেওয়া হয়েছে?
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কৈখালী স্টেশন থেকে জানানো হয়, তারা বন বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
প্রসঙ্গত, পুশ-ইন বলতে বোঝায় একটি দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী যখন অন্য দেশের সীমান্তে মানুষকে জোরপূর্বক ঠেলে দেয়, সাধারণত পাসপোর্ট বা বৈধ নথিপত্র ছাড়া। এটা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বিবেচিত।
ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটল যখন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে রাজনৈতিক ও মানবিক কিছু ইস্যু নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) ও এনআরসি (NRC) কার্যকরের প্রেক্ষাপটে অনেক মুসলিম ও নিম্নবর্ণের মানুষ ভয়ের মধ্যে রয়েছেন।
এদিকে, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে অনুপ্রবেশকারীদের বিস্তারিত পরিচয় যাচাই শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
এ ধরনের অনুপ্রবেশ বারবার ঘটতে থাকলে তা সীমান্ত নিরাপত্তা, দ্বিপক্ষীয় কূটনীতি এবং মানবাধিকার পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।