ইতালির সিসিলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এক ইউরোর পুরনো ঘরবাড়ি খুঁজে বের করে সেগুলো বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন দুই ভাই, আন্তোনিনো এবং কারমেলো কুশেরা। তাঁরা তাদের প্রতিষ্ঠিত রিয়েল এস্টেট সংস্থা ‘ভেরো আফারে’-এর মাধ্যমে এই উদ্যোগ পরিচালনা করছেন, যার অর্থ ইতালিয়ান ভাষায় “সাচ্চা চুক্তি”।
কয়েক বছর আগে এক ইউরো বাড়ির ধারণাটি চালু হওয়ার পর থেকেই এটি ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। সাধারণত জনসংখ্যা হ্রাসপ্রাপ্ত ছোট শহরগুলিতে এই ধরণের পুরনো বাড়ি বিক্রি হয়। অনেক সময় এসব বাড়ি শর্তসাপেক্ষে বিক্রি করা হয়, যেমন: তিন বছরের মধ্যে সংস্কার শেষ করতে হবে কিংবা নির্দিষ্ট অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে।

তবে কুশেরা ভাইদের উদ্যোগটি একটু ব্যতিক্রম। এখানে কোনো নগর প্রশাসন জড়িত নয় এবং ক্রেতাদের উপর সংস্কারের জন্য কোনো চাপ বা শর্ত নেই। যদি কেউ চায়, তবে তারা কেবলমাত্র সেই পুরনো বাড়িটি কিনে স্রেফ স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে পারে, এমনকি সেটা যদি ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকে তবুও।
তাঁরা বলেন, “পুরোনো মালিকেরা, যারা তাদের পারিবারিক বেহাল বাড়িগুলো থেকে মুক্তি পেতে চান, আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। আমরা বাড়িগুলোর ছবি তুলে অনলাইনে তালিকাভুক্ত করি, তবে আমরা চোখে না দেখে বিক্রি করি না। আগ্রহী ক্রেতাদের অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে এসে বাড়িগুলো দেখতে হবে।”

এই দুই ভাই মূলত সিসিলির ফাভারা শহরে থাকেন। তারা নিয়মিত সিসিলির বিভিন্ন শহর ও গ্রামে যান, যেখানে বহু পরিত্যক্ত বাড়ির মালিকরা রয়েছেন। অনেক বাড়ি ১৯৩০ সালের পুরনো নির্মাণ, কিছু আবার বৃহৎ কৃষকের সম্পত্তি ছিল যেখানে নিচতলায় পশু রাখা হতো।
তারা ইতিমধ্যেই ৫০টির বেশি এক ইউরোর বাড়ি বিক্রি করেছেন, যার বেশিরভাগই বিদেশিদের কাছে, বিশেষ করে উত্তর ইউরোপীয় ও ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের কাছে।
তাদের তালিকাভুক্ত অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে সুতেরা, কামপোফ্রাঙ্কো, আক্কুয়াভিভা প্লাতানি এবং বৃহৎ শহরের কিছু পুরনো এলাকা যেমন কালতানিসেট্তা ও আগ্রিজেন্তো।
একটি সাম্প্রতিক তালিকাভুক্ত বাড়ি হচ্ছে সুতেরা শহরের একটি চার শোবার ঘরের প্রায় ১০০ বর্গমিটার দুই তলা পাথরের তৈরি বাড়ি, যেটির বারান্দা থেকে প্রধান চত্বর দেখা যায়।
আরও একটি ব্যতিক্রমী সম্পত্তি হলো কালতানিসেট্তায় তিন তলা বিশিষ্ট প্রাচীন একটি প্রাসাদ, যার আয়তন ২০০ বর্গমিটার। এই ভবনটির নির্মাণকাল ৯ম শতকের আরব শাসনামলের সময়কার। এতে রয়েছে অসাধারণ ব্যালকনি ও শহরের বিখ্যাত বাসিলিকার নিকটে অবস্থিত।
কুশেরা ভাইয়েরা শুধু বাড়ি বিক্রি করেই থেমে থাকেন না, তারা ক্রেতাদের সার্ভেয়ার, স্থপতি, নির্মাণ দল ও নোটারি খুঁজে দিতেও সাহায্য করেন। যদিও কিছু প্রশাসনিক কাজের জন্য তারা সামান্য অর্থ গ্রহণ করেন (যেমন উত্তরাধিকার সনদ তৈরি করতে হলে প্রায় ৩০০ ইউরো), তারা দাবি করেন তাদের উদ্দেশ্য নিছক লাভ নয়, বরং ভালোবাসা থেকে তারা এই কাজটি করছেন।
আন্তোনিনো বলেন, “আমরা কোনো এজেন্সি ফি নেই। আমাদের ভূমিকে ভালোবাসি বলেই এই কাজটি করছি। সিসিলির অনেক সুন্দর গ্রাম ও শহর ধীরে ধীরে জনশূন্য হয়ে পড়ছে, যা আমাদের কষ্ট দেয়। আমরা চাই এখানে আবার প্রাণ ফিরে আসুক।”

পুরনো বাড়িগুলো অনেক সময় বহু উত্তরাধিকারীর মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। ফলে অনেক সময় কুশেরা ভাইয়েরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা উত্তরাধিকারীদের খুঁজে বের করে আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র প্রস্তুত করতে সাহায্য করেন। কারমেলো এই কাজটি করেন স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল অফিস ও গির্জার আর্কাইভ ঘেঁটে।
অনেকেই মূলত ত্রুটিমুক্ত, থাকার জন্য প্রস্তুত কোনো বাড়ি কিনতে চান। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, প্রায়ই সেই ক্রেতারাই একটি পরিত্যক্ত কিন্তু মনোরম দৃশ্যবিশিষ্ট বাড়ি কিনে ফেলেন।
আন্তোনিনো বলেন, “একজন ক্রেতা এসেছিলেন এমন একটি বাড়ি কিনতে যেটা সংস্কার ছাড়াই বসবাসযোগ্য। কিন্তু শেষে তিনি কিনলেন একটি এক ইউরোর পুরনো ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি, শুধু কারণ সেটির ছাদ থেকে দৃশ্যটা ছিল স্বপ্নের মতো।”
এই সস্তায় কেনা বাড়িগুলোর প্রকৃত মূল্য এক ইউরোর অনেক বেশি। কারণ, এই বাড়িগুলো অবস্থিত অসাধারণ পরিবেশে — ইতিহাস সমৃদ্ধ মধ্যযুগীয় গ্রাম, পাহাড়ঘেরা দৃশ্য, শান্ত পরিবেশ এবং পর্যটকদের ভিড় থেকে অনেক দূরে।
সুতরাং, যদি কেউ সত্যিকারের ইতালির ঐতিহ্যবাহী এক কোণে একটি ‘স্বর্গের টুকরো’ খুঁজে পেতে চান, তবে কুশেরা ভাইদের এই উদ্যোগ হতে পারে তাদের স্বপ্নপূরণের সিঁড়ি।