সিলেট অঞ্চলে সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয়ে টানা ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরমা, কুশিয়ারা, সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলেও এখনো কোনো নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তবে বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে কয়েকটি নদীর পানি। সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতও অব্যাহত রয়েছে।
আজ শনিবার সকালে গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের একটি নিচু অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ওই রাস্তায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলজুড়ে পানি দ্রুত বাড়ছে, যার ফলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সিলেটে পানি প্রবাহ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। পাহাড়ি ঢলের ফলে নদ-নদীর পানি সীমান্ত পেরিয়ে সিলেটে প্রবেশ করছে।
পর্যটন এলাকা জাফলং, বিছনাকান্দি এবং সাদাপাথর ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয়রা পর্যটকদের এসব এলাকায় না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী জানান, সড়কের কিছু অংশ পানিতে ডুবে গেলেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বৃষ্টি থামলে পানি নামবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানিয়েছেন, কেউ এখনো পানিবন্দী হননি। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার বলেন, আজকে পানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, তবে এখনো সেখানে কারও আশ্রয়ের প্রয়োজন হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল সকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত সিলেটে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে আরও ৭ মিলিমিটার। বৃষ্টি এখনও চলমান।
সিলেট সিটি করপোরেশন নগরের জলাবদ্ধতা মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। এটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন।
ওয়ার্ড পর্যায়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত থেকে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সকালেও থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় নাগরিকদের ভোগান্তি বেড়েছে। এর মধ্যেও অনেকে প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে বের হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।
পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় আগামী দিনে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়দের সতর্ক থাকা এবং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।