অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ আট মাস পেরিয়ে গেছে। সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি কতটা দেখছেন?
মির্জা হাসান: সংস্কারের ব্যাপারে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। তবে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা এখন এটুকু জানি, কোন ধরনের সংস্কার করতে হবে; বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে এসেছে, বিভিন্ন দল তাদের মতামত দিচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলছে।
সংস্কারের ক্ষেত্রে বিএনপি চাইছে নির্ধারক ভূমিকা পালন করতে। এর কারণ, সম্ভবত বিএনপি মনে করছে তারাই ক্ষমতায় যাবে। আর প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর লক্ষ্য যেহেতু ক্ষমতাসীন দলকে কঠোর চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখা, তাই সেটা বিএনপি পছন্দ করছে না। আমার ধারণা, তারা আগের শাসনপদ্ধতির গুণগত কোনো পরিবর্তন চাইছে না। অথচ আগের এই কাঠামো পরিবর্তনই এবারের গণ–অভ্যুত্থানের স্পিরিট (চেতনা) ছিল।
কিছু সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের প্রয়োজন। আর কিছু সংস্কার আছে, যেগুলো প্রশাসনিক নির্দেশেই বাস্তবায়ন করা যায়। প্রশাসনিক নির্দেশে যে সংস্কারগুলো করা যেত, অন্তর্বর্তী সরকার কি সেগুলো করছে, নাকি সে ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে?
মির্জা হাসান: আমার মনে হয় সরকার ভাবছে, নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দলগুলোই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো করবে। কিছু কাজ, যেমন অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতে সংস্কার হচ্ছে। এ ছাড়া দুর্নীতি, অর্থ পাচার ইত্যাদি বিষয়ে সরকার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে প্রশাসনিক নির্দেশে করা যেত, এমন অনেক সংস্কার সরকার করছে না, এটাও স্বীকার করতে হবে।
অনেকে এমন বলেছেন, এই সরকার আমলাতন্ত্রের খপ্পরে পড়েছে। আমরা পুলিশ সংস্কারের ক্ষেত্রে দেখেছি যে সবচেয়ে ‘বড়’ বাধা আসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
মির্জা হাসান: এর পেছনে কোনো রাজনীতি আছে কি না, তা জানি না। পুলিশ সংস্কারে আন্তক্যাডার দ্বন্দ্বের বিষয়টা আমরা সবাই মোটামুটি জানি। একটা বিষয় স্পষ্ট, প্রশাসন ক্যাডারের প্রভাব এই পুলিশ সংস্কার কমিশনের ওপরও ছিল। ২০০৭-০৮ সালেও ব্যাপক আকারে পুলিশ সংস্কারের ব্যাপারে চেষ্টা করা হয়েছিল। তখনো বাধা দিয়েছে প্রশাসন ক্যাডার। পুলিশ চায় অ্যাডমিনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকতে; তখনো তারা স্বাধীন পুলিশ কমিশন চেয়েছিল। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি পেতে তারা এ ধরনের স্বাধীন কমিশনের দাবি তুলেছিল।
রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে পুলিশের। তাই এবারও তারা স্বাধীন কমিশন চেয়েছে। কিন্তু পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হলো, এ বিষয়ে আরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার–বিশ্লেষণ করতে হবে। এটা খুবই উদ্ভট যুক্তি। কারণ, তাদের তো বিশেষজ্ঞ হিসেবেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
সবচেয়ে বেশি দরকার, ‘রেজিম’ পুলিশের পরিবর্তে ‘গণতান্ত্রিক’ পুলিশ তৈরি করা এবং থানা পর্যায়ে পুলিশের সংস্কার করা। সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড খুব বেশি টের পায় না। কিন্তু থানার ওসির স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড টের পায় প্রতিনিয়ত। এর ফলে থানা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন করে পুলিশের চেক অ্যান্ড ব্যালান্স করা ছাড়া ‘গণতান্ত্রিক’ পুলিশ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার এজেন্ডায় পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি রাখা হয়নি। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন এখনো জমা দেওয়া হয়নি। তাহলে কি এ দুটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের প্রয়োজন নেই?
মির্জা হাসান: সংস্কার কমিশন যাঁদের নিয়ে গঠিত হয়েছে, তাঁরা মনে করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং সরকারের মধ্যে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ তৈরি করাই হলো সংস্কার। বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন থেকে এমন ধারণা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে যিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তিনি অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী। ফলে তাঁর ক্ষমতা কমানো এবং এই ক্ষমতার মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ তাঁরা করেছেন। সংস্কার কমিশনগুলো ধরে নিচ্ছে যে নির্বাচন, সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ইত্যাদি বিষয় ঠিকঠাক হয়ে গেলেই হয়তো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এটা হয়তো অনেকাংশেই সত্য। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে ভবিষ্যতে স্বৈরাচারীব্যবস্থা কায়েম করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু শুধু এগুলোর মাধ্যমে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সরকার সংস্কারের বিষয়টি যেমন এজেন্ডায় নেই, একইভাবে নারী, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো বিষয়গুলোও গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। এগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত অধিকার এবং জবাবদিহির বিষয়গুলোকে গণতান্ত্রিক কাঠামোর অংশ বলে মনে করা হচ্ছে না। কারখানার ভেতরে–বাইরে শ্রমিকদের যেসব অধিকার রয়েছে, আমাদের এলিটরা সেটাকে গণতন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন না। ধরে নেওয়া হচ্ছে, এগুলো ‘বিশেষায়িত’ কিছু ব্যাপারমাত্র। কিন্তু এগুলোই হলো প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত করার অপরিহার্য উপাদান।
আপনি যে গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তা প্রতিষ্ঠার জন্য আসলে কী করা উচিত?
মির্জা হাসান: নাগরিকদের নিজস্ব সংগঠন তৈরি করতে হবে। যেমন ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কৃষক, নারী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ সমাজের সব শ্রেণি–পেশার মানুষের সংগঠন তৈরি করতে হবে। এরপর তাঁদের প্রতিনিধিদের পাঠাতে হবে সংসদের উচ্চকক্ষে। তাহলেই শুধু ‘নির্বাচনী’ গণতন্ত্রের চেয়ে বেশি কিছু অর্জন করা সম্ভব। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিক পরিষদ তৈরি করতে হবে। এগুলোর সাংবিধানিক বৈধতা দিতে হবে। এগুলো আবার জাতীয় পর্যায়ের কমিশনের অধীনে জবাবদিহির আওতায় থাকবে। তাহলে জাতীয় ও স্থানীয়—দুই ক্ষেত্রেই চেক অ্যান্ড ব্যালান্স নিশ্চিত করা যাবে।
বাংলাদেশে ওয়ার্ড সভা আছে। এদের ক্ষমতা খুবই সীমিত। ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এদের উপেক্ষা করে। কারণ, এদের কোনো আইনি–সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই। জাতীয় পর্যায়ে যেমন ক্ষমতাসীন দল সংসদ দখল করে নেয়, ঠিক একইভাবে স্থানীয় পর্যায়ের এই ওয়ার্ড সভাগুলোও দখল করে ফেলে ক্ষমতাসীন ইউপির চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। তাই এদের আইনি ভিত্তি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক হলো এ বিষয়গুলো আলোচনার মধ্যেই নেই। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনগুলোতে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো নিয়ে বিএনপি, জামায়াত এবং নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির মধ্যে মতভিন্নতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে আদৌ কোনো সংস্কার কি হবে?
মির্জা হাসান: সাধারণ মানুষ পুরোনো রাজনীতি দেখতে চায় না। তাদের কথা হলো আমরা চাই না আবার স্বৈরাচার কায়েম হোক কিংবা রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতায় গিয়ে জনগণকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করুক। সবাই চায় এবার কিছু ‘একটা’ হওয়া উচিত। সেই কিছু ‘একটা’র প্রতিফলন আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনে দেখতে পাচ্ছি। আমরা চাই, সব রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সংস্কার নিয়ে তাদের পরিকল্পনা জনসমক্ষে প্রকাশ করা। সেসব বিবেচনা করেই মানুষ তাদের ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলাদেশে বেশির ভাগ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল। এবার দুটির মধ্যে একটি দল নেই। জামায়াতে ইসলামীকে আমি বলব না তেমন শক্তিশালী দল, তবে দলটির শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা আছে। এখন এনসিপিকে আমরা দেখছি। আমার ধারণা, সংস্কার নিয়ে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ছোট দলগুলোর সঙ্গে সরকারের একটা সমঝোতা হবে। তাদের মূল প্রতিপক্ষ বিএনপি। দলটি (বিএনপি) চাইবে বাকিদের ঐক্য ভাঙতে। সেটা পারবে কি না, তা এখনই বলা যাবে না।
বর্তমান সরকার সেই অর্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, বরং অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার। এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে যারা, তারাই এনসিপি গঠন করেছে। যেসব সংস্কার প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো দিয়েছে সরকার নিজেই। সরকার এখানে একটা পক্ষ। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছে যে সবাই একটা সমঝোতায় এলে সেই অনুযায়ী সরকার এগোবে। এখন পর্যন্ত আমরা যা দেখছি, তেমন সমঝোতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বিএনপি স্পষ্টভাবেই বলছে যে নির্বাচিত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার করবে। অন্তর্বর্তী এ সরকারের এ ধরনের সংস্কার করার কোনো এখতিয়ার নেই। এটা তারা বলতে পারছে, কারণ আমাদের দেশে রাজনীতিবিদেরা মনে করেন গণতন্ত্র মানে শুধুই নির্বাচন; এর বাইরে আর কিছু নেই।
বিএনপি যেমন বলে দিয়েছে আলোচনায় সমাধান না হলে তারা রাস্তায় নামবে। রাস্তার শক্তির মাধ্যমেই ফয়সালা করতে চায় তারা। কিন্তু বিএনপির প্রতিপক্ষও খুব দুর্বল নয়। বিশেষ করে অন্য যারা রাজনৈতিক পক্ষ রয়েছে, যেমন এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী ও বর্তমান সরকার। ফলে প্রত্যেকের শক্তির ভারসাম্যের মাধ্যমে একটা ফয়সালা হবে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা কী হবে, বলা মুশকিল। একটা বিষয় ইতিবাচক যে সেনাবাহিনী বলে দিয়েছে রাজনীতিতে ঢুকে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে; তারা আর এর মধ্যে ঢুকতে চায় না। তারা নিরপেক্ষ থাকতে চায়।
অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারছে না—বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিকবার এ রকম কথা বলা হয়েছে। সম্প্রতি এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বললেন, প্রশাসন বিএনপির পক্ষে, এদের অধীন নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাঁদের এ বক্তব্যগুলোকে কীভাবে দেখছেন?
রাজনীতিতে অনেক ধরনের ‘রেটরিক’ (পোশাকি ব্যাপার) আছে। নাহিদ ইসলামের সর্বশেষ কথা আমার কাছে এ রকম একটা রেটরিক মনে হয়েছে। এটা সত্য যে সরকার ও প্রশাসনের অনেক জায়গায় বিএনপির প্রভাব আছে। কিন্তু নাহিদ ইসলাম যেভাবে বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছেন, মনে হচ্ছে বিএনপি একটা ‘কিংস পার্টি’।
বিএনপি যেমন এনসিপিকে ‘কিংস পার্টি’ বলেছিল, এবার এনসিপিও উল্টো সেই চাপটা বিএনপির ওপর প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। এনসিপি এর মাধ্যমে রাজনৈতিক বক্তব্য-পাল্টাবক্তব্যে একধরনের ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। তারা (এনসিপি) জনগণকে বোঝাতে চাইছে, বর্তমান সরকার তাদের ক্ষমতায় বসাবে—এমন ধারণা ঠিক নয়।
আওয়ামী লীগ দেশে ‘একটা দলীয় শাসনব্যবস্থা’ কায়েম করেছিল। তাদের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ আরও অনেক ধরনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। আবার দলটির নেতা–কর্মী–সমর্থকের সংখ্যাও কম নয়। এ রকম পরিস্থিতিতে দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া না–দেওয়া নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিবেচনাটা কী হওয়া উচিত?
মির্জা হাসান: আমরা অনেকে একই সঙ্গে দুই ধরনের কথা বলছি। আমরা আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের বিচার চাইছি; একই সঙ্গে তাদের নির্বাচনে আসার কথা বলছি। নীতিগত জায়গা থেকে আমি দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। এর পরিবর্তে রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান হওয়া উচিত। যদি এর মধ্যে বিচার হয়ে যেত, তাহলে আমরা জানতাম যে আওয়ামী লীগের কারা নির্বাচনে অযোগ্য।
শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে অন্য কারও নেতৃত্বে যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসতে চায়, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই বাধা দেওয়া হবে বলে আমার মনে হয়। আওয়ামী লীগের সমর্থক গোষ্ঠীর কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে অন্য দলগুলোও খুব একটা হইচই করবে না বলে আমার ধারণা। তারা (বিএনপি) বরং আওয়ামী লীগকে ছাড়াই নির্বাচনে যেতে আগ্রহী হবে। তাই এ বিষয়ে এখনো আলোচনার সময় আসেনি বলে আমার মনে হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে সম্প্রতি কিছু আলোচনা উঠেছিল। সরকারের ভেতরে–বাইরে কেউ কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়কে কীভাবে দেখেন?
মির্জা হাসান: আসলে মানুষ যখন অর্থনৈতিকভাবে স্বস্তির মধ্যে থাকে, তখন তারা অন্য ব্যাপার নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। তখন তারা চায়, যে সরকার আছে, সেটাই থাকুক। তা ছাড়া দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পারফরম্যান্স নিয়ে মানুষ তো খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। আমরা দেখেছি, রমজানের সময় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে ছিল। ঈদে মানুষ ভালোভাবে বাড়িতে যাওয়া-আসা করতে পেরেছে। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের সন্তুষ্টিবোধ তৈরি হয়েছিল। এ কারণেই হয়তো কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা নিয়ে মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বাংলাদেশে উগ্রপন্থার উত্থানের আশঙ্কা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়কে আপনি কীভাবে দেখছেন?
মির্জা হাসান: নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদনটি অসত্য নয়, তবে কিছুটা ‘একপক্ষীয়’ বলে মনে হয়েছে। গণ–অভ্যুত্থানের পর নানা ধরনের শক্তির উদ্ভব হওয়াই স্বাভাবিক। উগ্রপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের ঘাটতি আছে, সক্ষমতার অভাব আছে এবং সেগুলো নিয়ে সমালোচনা করাও জরুরি। কিন্তু সরকার এগুলো উসকে দিচ্ছে, বিষয়টা এমন নয়।
সরকার নিজেই উগ্রপন্থীদের পক্ষে—এমন প্রচারণার ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। কারণ, ভারতীয় গণমাধ্যমকে আমরা দেখেছি বাংলাদেশের এসব বিষয় নিয়ে নানা রকম ভুল প্রচারণা চালিয়েছে। এ রাজনীতিটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মন্তব্য দিয়ে শেষ করতে চাই।
মির্জা হাসান: আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা আসবে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। এর ফলে পুরো বিষয়টা আবারও রাজপথ বা রাস্তা দখলের রাজনীতির দিকে গড়াতে পারে। এককথায়, আমরা একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।