সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনি প্রকৌশল (পিএমই) বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে চতুর্থ দিনের মতো ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে তাঁরা বিভাগের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে একাডেমিক কার্যক্রমসহ গবেষণাগারও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রভাষক তাজবিউল ইসলামের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে গত শনিবার থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে।
পিএমই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, “শনিবার সিন্ডিকেটের ২৩৬তম সভার পর থেকে বিভাগে ক্লাস, পরীক্ষা ও ল্যাব কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অফিসে তালা দিয়েছেন। বিভাগের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত। কারণ, কোনো অনুপযুক্ত নিয়োগ মেনে নেওয়া যাবে না।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুনে তাজবিউল ইসলামকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন প্রশাসন। অভিযোগ ওঠে, তিনি প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। ৯ জুন যোগদানের পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, সরকার পরিবর্তনের পর বিভাগটি লিখিতভাবে নতুন প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেয়। এরপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়মের প্রমাণ মেলায় সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেয় যে, প্রভাষক তাজবিউল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে এবং তাঁর বেতনসহ সব আর্থিক সুবিধা স্থগিত থাকবে। জবাব পাওয়ার পর আইন উপদেষ্টার মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিএমই বিভাগের শিক্ষার্থী সাঈদুল ইসলাম বলেন, “তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ার পরও দুই দফা সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষককে বরখাস্ত না করায় আমরা সব ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছি এবং বিভাগীয় অফিসে তালা দিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, “সিন্ডিকেটের ২৩৫তম সভার সিদ্ধান্তই এখনো কার্যকর রয়েছে। শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে প্রভাষক তাজবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও গত দুই দিনে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে তাঁর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ আমরা বুঝি। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এই শিক্ষক বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করছি। দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে।”