লাহোরে বিস্ফোরণের শব্দ, যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে

News Desk

লাহোরে বিস্ফোরণের শব্দ, যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে. Dhakainlight.com

পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকালে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের শহর লাহোরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং দেশটির জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম জিও টিভি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এই বিস্ফোরণের সময় ও প্রেক্ষাপট ঘিরে উদ্বেগ বেড়েছে পুরো দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে। এর মাত্র একদিন আগে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারতের ছয়টি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর পাকিস্তান পাল্টা প্রতিরোধ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার কাশ্মীর সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই আজ সকাল থেকে আবার বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠল লাহোর।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এখন বাড়তি সতর্কতায় রয়েছে। লাহোর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে মুরিদক এলাকায় দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর ট্যাংক ট্রাকের ওপরে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্যাটেলাইট চিত্র ও সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বড়সড় মোতায়েনের ইঙ্গিত মিলেছে।

বর্তমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কা গভীর হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতোমধ্যেই দুই দেশের প্রতি শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। একাধিক কূটনৈতিক মহল ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করে বলছে, এই সংঘাত যদি আরও বিস্তৃত হয়, তবে তা গোটা অঞ্চলের জন্যই মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

উল্লেখ্য, চলমান উত্তেজনার সূচনা হয় গত ২২ এপ্রিল, যখন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। ভারত সরাসরি এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে ভারত পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ওই রাতে মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে নারী ও শিশুসহ মোট ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং অন্তত ৫৭ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পাকিস্তানের পাল্টা গোলাবর্ষণে ১৫ জন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৪৩ জন আহত হয়েছেন। গোলার আঘাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন বলে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকা জানিয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে। সীমান্তের দু’পাশেই বাড়ানো হয়েছে সেনা মোতায়েন, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পর্যটন ও বেসামরিক চলাচল। আকাশপথেও সীমিত আকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, ততই বাড়বে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এত তীব্র উত্তেজনা খুব কমই দেখা গেছে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে এই মুহূর্তে কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Leave a Comment

Footer Section