লালমনিরহাটে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আগুনে ছয়জন নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বছরের ৫ আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন ওরফে সুমন খানের শহরের বহুতল বাসভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর আরমান আরিফ নামের এক তরুণ সোমবার দিবাগত রাতে লালমনিরহাট সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। তিনি নিহতদের সহযোদ্ধা পরিচয়ে মামলার বাদী হন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ওইদিন বিকেলে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সুমন খানের বাড়ির সামনে দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী একটি মিছিল যাচ্ছিল। তখন আসামিদের সঙ্গে মিছিলকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর ছয়জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পুড়ে মারা যান ছয়জন।
নিহতরা হলেন জোবায়ের হোসেন, আল শাহরিয়ার রিয়াদ (তন্ময়), শাহরিয়ার আল আফরোজ (শ্রাবণ), জনি মিয়া, রাধিক হোসেন (রুশো) এবং রাজিব উল করিম সরকার। তাঁদের সবার বয়স ১৭ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী। আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলার পরপরই পুলিশ শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন—জাহিদ হাসান (ভুট্টু), সেলিম খান (বকুল), শরীফ মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, বাবুল, মো. দোয়েল ও মো. জুয়েল মিয়া। তাঁদের মধ্যে প্রথম দুজন পৌর আওয়ামী লীগের ৮ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
গতকাল তিনজনকে আদালতে হাজির করা হলে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। বাকি তিনজনকে আজ আদালতে তোলা হবে। লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মোহাম্মদ নুরনবী ও পরিদর্শক (তদন্ত) বাদল কুমার মণ্ডল জানান, মামলার তদন্ত চলছে এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাদী আরমান আরিফ অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের সহযোদ্ধা ছয়জনকে পরিকল্পিতভাবে আটক করে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এত দিনেও সঠিক তদন্ত হয়নি। তাই ন্যায়বিচারের আশায় আমি নিজেই মামলা দায়ের করেছি।”
এই ঘটনা লালমনিরহাট শহরে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর রয়েছে।