লডিসি উত্তরণে মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়ে, আশার আলো মাথাপিছু আয় ও ভঙ্গুরতা সূচকে

News Desk

লডিসি উত্তরণে মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়ে, আশার আলো মাথাপিছু আয় ও ভঙ্গুরতা সূচকে. Dhakainlight.com

বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। জাতিসংঘের নির্ধারিত তিনটি সূচকে ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি থাকলেও ২০২৫ সালের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী মানবসম্পদ সূচকে সামান্য অবনতি লক্ষ্য করা গেছে। এটি উন্নয়নশীল দেশের পথে বাংলাদেশের যাত্রায় নতুন চিন্তার জায়গা তৈরি করেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্যমতে, ২০২৫ সালে মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশের অর্জন হয়েছে ৭৭.১ পয়েন্ট, যা ২০২৪ সালের ৭৭.৫ পয়েন্ট থেকে কিছুটা কম। এই সূচকের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিশু ও মাতৃমৃত্যু, সাক্ষরতা, এবং লিঙ্গ সমতার মতো উপাদান বিবেচনায় নেওয়া হয়। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে অবনতি উল্লেখযোগ্য, যেখানে অর্জন ৭৭ থেকে কমে ৭৫.৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

এদিকে আশার আলো রয়েছে মাথাপিছু আয় এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে। গত তিন বছরের গড় হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২,৭৩৪ মার্কিন ডলার। এই সূচকে উত্তরণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন মাত্র ১,৩০৬ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই এই সূচকের মানদণ্ড ছাড়িয়ে গেছে।

অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০২৫ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ২১.৮, যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য কম (২১.৯)। এই সূচকে ৩২ বা তার নিচে থাকা প্রয়োজন। দুর্যোগ, কৃষি উৎপাদনের অস্থিতিশীলতা, রপ্তানির বৈচিত্র্য ও জনসংখ্যা ঘনত্ব বিবেচনায় এই সূচক নির্ধারিত হয়।

বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালের জাতিসংঘের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ২০২১ সালেই উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। মূলত ২০২৪ সালে উত্তরণের কথা থাকলেও করোনা মহামারির প্রভাবে সময়সীমা পিছিয়ে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য যেকোনো দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন বা মাথাপিছু আয় নির্ধারিত সীমার দ্বিগুণ হতে হয়। বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই যোগ্যতা অর্জন করেছে, যা এ পথচলায় একটি নজিরবিহীন ঘটনা।

এলডিসি থেকে উত্তরণ শুধুমাত্র মর্যাদার বিষয় নয়, বরং এর মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরও জোরালো হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে এবং অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা আসতে পারে। তবে এলডিসি সুবিধা হারালে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ও সহজ শর্তের আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যেতে পারে, যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি জরুরি।

মানবসম্পদ সূচকের এই সামান্য পতন ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে যদি এখন থেকেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে দৃঢ় নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া না হয়। বিশেষ করে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার, স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো এবং গ্রামীণ শিক্ষার মানোন্নয়নে আরও মনোযোগ জরুরি।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য উত্তরণ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। তবে সাফল্য ধরে রাখতে হলে শুধু পরিসংখ্যানেই নয়, বাস্তব উন্নয়নের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি খাতে।

আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে, এলডিসি উত্তরণের সঙ্গে সম্পর্কিত পরবর্তী নীতিমালার দিকগুলো নিয়ে পৃথক বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হবে।

Leave a Comment

Footer Section