টানা দ্বিতীয় রাতের মতো ভয়াবহ বিমান ও ড্রোন হামলায় কেঁপে উঠেছে ইউক্রেন। শনিবার দিবাগত রাতে দেশজুড়ে চালানো রুশ হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা বিভাগ। রাজধানী কিয়েভসহ ঝিতোমির, খমেলনিতস্কি এবং মাইকোলাইভ অঞ্চলে এই হামলার তীব্রতা ছিল সবচেয়ে বেশি। নিহতদের মধ্যে রয়েছে তিন শিশু-কিশোরও।
রুশ হামলার এমন সময় হলো যখন দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে সক্রিয় তৎপরতা চালাচ্ছে। তবে রাশিয়ার লাগাতার আগ্রাসনে সেই প্রচেষ্টা আবারও অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল।
রোববার সকালে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী জানায়, তারা রাতভর রাশিয়ার ছোড়া ৪৫টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২৬৬টি ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে। এরপরও পশ্চিমাঞ্চলীয় খমেলনিতস্কিতে চারজন, কিয়েভে চারজন এবং দক্ষিণাঞ্চলের মাইকোলাইভে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছে অন্তত ১৬ জন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু।
রাশিয়ার পক্ষ থেকেও পাল্টা দাবি এসেছে যে মস্কোর দিকে আসা অন্তত ১২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন তারা ভূপাতিত করেছে এবং এ কারণে মস্কোর চারটি বিমানবন্দরে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এর আগের রাতেও মস্কো ইউক্রেনে ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ২৫০টিরও বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছিল, যাতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। এদিকে রুশ সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ইউক্রেন তাদের ওপর এক সপ্তাহে প্রায় ৭৮৮টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার এক ভিডিওবার্তায় বলেন, রাশিয়ার এই নির্মমতা বন্ধ করতে হলে আন্তর্জাতিক মহলকে রুশ নেতৃত্বের ওপর আরও কঠিন চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তিনি নিষেধাজ্ঞা আরও জোরালো করার দাবি জানান।
জেলেনস্কি তাঁর বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং বিশ্বের সব শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন মস্কোকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করার জন্য দৃঢ় অবস্থান নেয়। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে বন্দী বিনিময় নিয়ে যে সমঝোতা হয়েছে, তা যেন অব্যাহত থাকে।
গত শুক্রবার ও শনিবার কিয়েভ এবং মস্কোর যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, এক হাজার বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে প্রথম দফায় প্রতিপক্ষের ৩৯০ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং শনিবার আরও ৩০৭ জনকে মুক্ত করা হয়।
তবে এসব শান্তিপ্রচেষ্টা ও মানবিক অগ্রগতির মাঝেও রাশিয়ার লাগাতার আগ্রাসী কর্মকাণ্ড ইউক্রেনের জনগণের জীবনকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জেলেনস্কির আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান—সত্যিকারের চাপ প্রয়োগ ছাড়া রুশ আগ্রাসন বন্ধ করা সম্ভব নয়।