তিন বছর মেয়াদি অভিনয়শিল্পী সংঘের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। গতকাল শনি নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আজাদ আবুল কালাম। নতুন নেতৃত্বের সংগঠনে কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন এবং অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে ভাবনাচিন্তা কী, তা শুনলেন মনজুর কাদের।
অভিনয়কেন্দ্রিক ব্যস্ততার মধ্যেও সাংগঠনিক কাজে যুক্ত হয়েছেন। অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চয় কোনো ভাবনাচিন্তা কাজ করেছে। জানতে চাই, কী সেই ভাবনাচিন্তা?
আজাদ আবুল কালাম: আগেও আমি এই সংগঠনের সঙ্গে ছিলাম। নাসিম (আহসান হাবিব) যখন সভাপতি হলো, তখন কেউ কেউ চাইছিল নির্বাচন করি। কিন্তু আমি চাইছিলাম না। এবার যেহেতু ওরা নেই, এদিকে ছোট–বড় সবাই বলাবলি করছিল, আমি যেন নির্বাচন করি। শেষ মুহূর্তে তাদের প্রত্যাশা আর সমর্থনে নির্বাচন করেছি। সাংগঠনিক জায়গা থেকে মনে হচ্ছিল, এবার কেউ এগিয়েও আসছিল না। এমনকি আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম, সেদিন রাত নয়টায় মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ সময়, আমি দিয়েছিলাম পৌনে নয়টায়। এরপর দেখলাম সভাপতি পদে আবদুল্লাহ রানাও জমা দিল। আমার এ–ও মনে হলো, অভিনয়শিল্পী সংঘের অবস্থান অন্যান্য অনেক সংগঠনের চেয়ে ভালো। এটার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে, তহবিল আছে। আর অভিনয়শিল্পীদের দাবিদাওয়া তো আসলে অনেক। অভিনয় যে পেশা, এই প্রথম দাবিই তো এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। সরকারের কাছ থেকে এখনো স্বীকৃতি নেই। এটা আদায়ে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করা। আগে যারা ছিল, তারাও এটা নিয়ে কাজ করেছে। আগের কমিটির যারা ছিল, তাদের যেসব অসমাপ্ত কাজ আছে, ওইগুলো নিয়ে কাজ করা। কাজগুলো তো দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যারা আসবে, তাদের এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যেও একটা বৈষম্য আছে, কেউ অনেক কাজ করছে, আবার কেউ কাজ পাচ্ছেই না। চেষ্টা থাকবে যারা সত্যিকারের অভিনয়শিল্পী, তারা যেন নিয়মিত কাজ পায়। এখন তো সবাই অভিনেতা নয়, অনেকে ফুর্তি করতে অভিনয়ে চলে আসছে, ভালো লাগছে চলে আসছে। ভালো লাগলে অভিনয়ে তো চলে আসা যায় না। যারা অভিনয় করতে চায়, দীর্ঘ সময় একটা চর্চার মধ্যে ছিল, অভিনয় করে জীবন কাটাতে চায়, তাদের জন্য কাজের ক্ষেত্রটা আরও তৈরি করতে পরিচালক-প্রযোজকদের সঙ্গে বসা। এসব তো আবার আমার একার মতামতে হবে না, সংগঠনের যারা আছে, সবার সঙ্গে আলাপ করতে হবে।
আজাদ আবুল কালাম: সবার ভাবনাচিন্তা নিয়ে কাজ করতে চাই। যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে হয়তো জিততে পারেনি, তাদেরও অনেকগুলো মৌলিক ভাবনা আছে, সেগুলো আমরা শুনব। তারা হয়তো বিভিন্ন কমিটিতেও থাকবে। অভিনয়শিল্পীদের সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয় এবারের নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনায় ছিল। অভিনয় অঙ্গনে রাজনৈতিক বিভাজনের এ বিষয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘ কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?
আজাদ আবুল কালাম: শিল্পী সংঘের প্রধান বিষয় হচ্ছে তারা অভিনেতা। সবারই যেকোনো রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকতে পারে। কিন্তু তার মূল পরিচয় অভিনয়শিল্পী। অভিনয়শিল্পী রাজনীতিসচেতন হবে কিন্তু কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করবে, তা কাম্য নয়। এই লেজুড়বৃত্তি করতে গিয়ে বিভাজন তৈরি হয়।আজাদ আবুল কালাম: চাইলেই অভিনয়শিল্পীরা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে পারে। আমি যে এতটা সময় ধরে অভিনয়ের সঙ্গে আছি, কখনো তো বিএনপিও করিনি, আওয়ামী লীগও তো করিনি। ব্যাপারটা আবার এমন নয়, এসব করা যেত না। এদের কারও প্রতি আমার বিশ্বাস নেই, এটাও তো নয়। কিন্তু আমি কখনো সংশ্লিষ্ট হইনি। এটার জন্য যে নানান ধরনের লোভের বিষয় ছিল না, তা–ও নয়। কিন্তু আমার মনে হয় না কখনো আমি রাজনৈতিক কর্মী হতে চেয়েছি। আমি সব সময় শিল্পী হতে চেয়েছি। আমার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ আছে, দেশচেতনাসহ সবই আছে। শিল্পীর বড় পরিচয় শিল্পী। একজন শিল্পীর বড় সুবিধাও আছে, সহজে মানুষের সঙ্গে মিশতে পারে। মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে, আশাও করে। ক্ষমতায় যে দলটা থাকে, সে সব সময় চায় সবাই তার সঙ্গে থাকুক। কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকবে, তাদের কাছে শিল্পীরা যাবে দাবি নিয়ে, কাজটা তার কাছ থেকে আদায় করার জন্য। তার রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করার জন্য নয়। কেউ কেউ বলেন, চাপে পড়ে সম্পৃক্ত হতে হয়…
আজাদ আবুল কালাম: চাপে পড়ে শিল্পীদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি একেবারে অবান্তর নয়। কারণ, রাজনীতিতে সর্বগ্রাসী একটা ব্যাপার তো আছেই। রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় আসে, তারা তো ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে। সে মনে করে, সবাই তার লোক। অথবা তার না মনে হলে তাকে নিগৃহীত করা হতে পারে। এটা হয়। এটা যে হবে না, তা আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, আমাদের কারো মধ্যে সেই গণতান্ত্রিক চর্চা কারও নেই। একেবারেই নেই। শিল্পীর ক্ষেত্রে চাপটা যদি একা মোকাবিলা করতে না পারে, সংঘের কাছে আসতে পারে। অনেক সময় হতে পারে, একজন শিল্পী চাপে পড়েছে, চাপে একরকম রাজনৈতিক দলের কাছে নতিস্বীকার করতে হচ্ছে। তখন তার সংঘবদ্ধ যে সংগঠন, তার পরামর্শ নিতে পারে; কারণ, আমাদের পরিচয় অভিনেতা। আর যার রাজনৈতিক পরিচয় দরকার হয়, সে তো আস্তে আস্তে রাজনীতিতে চলে যায়; সে তখন আর অভিনয়শিল্পী থাকে না। হয়তো দেখা যায়, সংগঠনের কেউ কেউও রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে। দলের নেতৃত্বে যারা থাকে, তাদের কিন্তু যেকোনো সরকারের কাছে যেতেই হয়। এখন যে সরকার আছে, কমিটির দাবিদাওয়া নিয়ে তো সেই সরকারের কাছে যেতেই হবে। সরকার যদি একটা দেশের মুখপাত্র হয়, তার সঙ্গে কথা বলতেই হবে। কথাবার্তা বলা, দাবিদাওয়া তোলার বিষয়ে তো তাকেই বলতে হবে। তবে এই জানাতে গিয়ে কিছু বিষয় সামনে আনা হয়, কেউ কেউ এটাকে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি বোঝাতে চায়।