রাউজানে খুন, পাল্টা খুন চার দশক ধরে

News Desk

রাউজানে খুন, পাল্টা খুন চার দশক ধরে. Dhakainlight.com

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গরিব উল্লাহ পাড়ায় ১৯ এপ্রিল রাতে যুবদলের কর্মী মানিক আবদুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি এক প্রতিবেশীর বাড়িতে রাতের খাবার খেতে বসেছিলেন, এমন সময় চার-পাঁচজন যুবক টিনের ছাউনির ঘরে ঢুকে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে। মানিকের সঙ্গী পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। স্থানীয়রা এই হত্যাকাণ্ডটিকে ‘প্রতিশোধের খুন’ হিসেবে চিহ্নিত করছে, কারণ পুলিশের ধারণা, মানিক এক সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করেছিল, যার প্রতিশোধস্বরূপ তাকে হত্যা করা হয়েছে।

মানিকের হত্যার দুই দিন পর, ২২ এপ্রিল দুপুরে, একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের শমসের নগরের গাজীপাড়ায় যুবদলের কর্মী মুহাম্মদ ইব্রাহিমকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। ইব্রাহিম স্থানীয় চায়ের দোকানে বসেছিলেন, এমন সময় তিনটি অটোরিকশায় করে ১০-১২ জন যুবক এসে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি করে পালিয়ে যায়।

এই ঘটনা নতুন কিছু নয়, কারণ চট্টগ্রামের রাউজানে প্রায় চার দশক ধরে রাজনৈতিক সহিংসতা ও খুনোখুনি চলছে। এতে এক শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত রাউজানে ১২ জন খুন হয়েছেন, এর মধ্যে সাতজন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। খুনোখুনি এবং রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে রাউজান এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে।

রাউজানে খুনোখুনির ইতিহাস অত্যন্ত পুরোনো, যা ১৯৮০ সালের আশির দশকে এরশাদ আমলের সময় শুরু হয়েছিল। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল হারুনের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে রাউজানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর পরে ১৯৯১ সালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এনডিপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছিল আওয়ামী লীগ, আর এই দ্বন্দ্বের মধ্যে খুনোখুনি অব্যাহত ছিল।

২০০৮ সাল থেকে রাউজানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূলত এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে ছিল, কিন্তু ২০২4 সালের পর তিনি কারাগারে চলে যাওয়ার পর আবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। বর্তমানে, বিএনপির গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খন্দকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও চরম আকার ধারণ করেছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের কারণে রাজনৈতিক খুনের ঘটনা বাড়ছে।

এখানে নানা ধরনের অস্ত্র পাচার, চাঁদাবাজি, এবং ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটে। রাউজানে শমসেরনগর, গাজীপাড়া ও অন্যান্য এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।

বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং গোলাম আকবর খন্দকার এই সহিংসতার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছেন। তারা অভিযোগ করছেন, একে অপরের অনুসারীরা তাদের কর্মীদের হত্যার জন্য দায়ী। রাউজানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ নানা চেষ্টা করছে, কিন্তু সেখানে নতুন করে সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হয়ে উঠছে।

যেহেতু এখানকার অনেক খুনের ঘটনায় কেউ শাস্তি পায়নি, তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচার পাওয়ার আশা কমে গেছে। এই পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে, কারণ রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।

Leave a Comment

Footer Section