যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন দমনে ‘প্রজেক্ট এসথার’ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

News Desk

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন দমনে ‘প্রজেক্ট এসথার’ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে d

যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল প্রভাবশালী থিঙ্কট্যাংক হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলনকে দমনে যে নীতিপত্র প্রণয়ন করেছে, তার নাম ‘প্রজেক্ট এসথার’। ২০২৪ সালে প্রকাশিত হলেও এই প্রকল্পটি ২০২৫ সালে এসে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এই নীতিমালার সুপারিশ অনুযায়ী কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।

প্রজেক্ট এসথারের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হচ্ছে, আগামী ২৪ মাসের মধ্যে তথাকথিত ‘হামাস সমর্থক নেটওয়ার্ক’কে ভেঙে ফেলা। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোকে আইনি, রাজনৈতিক এবং আর্থিকভাবে দমন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের সমালোচনা করলে ব্যক্তি বা সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসবাদে সহায়তাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করার সুপারিশ রয়েছে নীতিপত্রটিতে।

এই প্রকল্পে উল্লেখ রয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করছেন, তাদের চিহ্নিত করে ভিসা বাতিল করা এবং ফিলিস্তিনপন্থী কনটেন্ট ঠেকাতে সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণ বাড়ানো দরকার। প্রজেক্ট এসথারে এমন কিছু সুপারিশ রয়েছে যা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সমিতি গঠনের অধিকারের পরিপন্থী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নীতিপত্রটি প্রণয়ন করেছেন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিক্টোরিয়া কোয়েটস, যিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেন। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কিছু উগ্র ডানপন্থী ইহুদি ও ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী। তাদের দাবি, ফিলিস্তিনিদের অধিকারে কথা বলা যেকোনো সংগঠনই ‘হামাসের সহযোগী’।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে কোনো সংগঠন সরাসরি হামাসের সঙ্গে যুক্ত। বরং সংগঠনগুলো মানুষের মানবাধিকার ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবিতে কাজ করছে।

প্রজেক্ট এসথারে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তরুণ মার্কিনদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কমে যাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে আন্দোলন বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ হয়েছে। এসব আন্দোলন দমন করতে পুলিশেরও সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে প্রজেক্ট এসথারের সুপারিশ অনুযায়ী, কিছু বিভাগ যেমন ‘মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামিক স্টাডিজ’কে ‘ইসরায়েলবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে পুনর্গঠনের জন্য চাপ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এসব বিভাগের শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি চালানোর নির্দেশও রয়েছে। সেইসঙ্গে প্রজেক্ট এসথারে উল্লেখ আছে, ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে দেশে ফেরত পাঠানোর কৌশল নিতে হবে, এবং এ ক্ষেত্রে ক্যানরি মিশন নামের একটি ওয়েবসাইট ব্যবহার করার কথাও বলা হয়েছে।

আলোচিত এই প্রকল্পে মুসলিম শব্দটি থাকা মাত্রই কোনো সংগঠনকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আমেরিকান মুসলিমস ফর প্যালেস্টাইন (AMP) নামক সংস্থাকে প্রকল্পটি হামাস-সমর্থক নেটওয়ার্কের কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করেছে। এএমপির নির্বাহী পরিচালক ওসামা আবুইরশাইদ বলেন, এই প্রকল্পটি ইসলামবিদ্বেষ ও রাজনৈতিক হয়রানির একটি নকশা মাত্র। শুধুমাত্র নামের মধ্যে মুসলিম থাকলেই তাদের নিশানা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উদ্যোগ একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক নীতি, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের ফিলিস্তিনপন্থী কণ্ঠগুলোকে স্তব্ধ করার চেষ্টা চলছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো প্রজেক্ট এসথার নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে এই নীতির আরও কঠোর প্রয়োগ দেখা যেতে পারে।

এদিকে হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এই প্রকল্পে সমালোচকদের কোনো জবাব দেয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন যত তীব্র হচ্ছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ততই এর দমন-পীড়ন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে দেশটির বুদ্ধিজীবী সমাজে।

Footer Section