যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন তৈরি বাধ্যতামূলক হলে এর দাম প্রায় তিন গুণ বেড়ে ৩,৫০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষক ড্যান আইভস। তাঁর মতে, এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন “অর্থনৈতিক প্রলয়” ডেকে আনতে পারে, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে।
সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বক্তব্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি চান অ্যাপলের আইফোন ভবিষ্যতে ভারতের মতো দেশে নয়, বরং আমেরিকাতেই তৈরি হোক। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি অ্যাপল এ নির্দেশনা না মানে, তাহলে আমদানিকৃত প্রতিটি আইফোনের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
তবে প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের প্রধান বিশ্লেষক ড্যান আইভস CNN-কে বলেন, “এই ধারণা একটি কাল্পনিক গল্প মাত্র।” কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এত জটিল উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিপুল অর্থ ও সময় লাগবে। তাঁর মতে, মাত্র ১০ শতাংশ উৎপাদন সরিয়ে আনতে অ্যাপলের লাগবে তিন বছর এবং খরচ হবে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে অ্যাপলের আইফোন উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশই চীনে হয়। চিপস আসে তাইওয়ান থেকে, স্ক্রিন সরবরাহ করে দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি, আর অন্যান্য যন্ত্রাংশ আসে চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে। এসব কারণেই বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকায় আইফোন তৈরির চেষ্টা করলে পুরো সরবরাহ ব্যবস্থাই নতুন করে তৈরি করতে হবে—যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই অ্যাপলের শেয়ারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অ্যাপলের শেয়ারের মূল্য ১৪ শতাংশ কমেছে।
অ্যাপলের সিইও টিম কুক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর অংশ হিসেবে তারা আগামী চার বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অধিকাংশ আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত।
তবে বিশ্লেষক জিন মুনস্টারের মতে, যদি শুল্কহার ৩০ শতাংশের নিচে থাকে, তাহলে অ্যাপল তা সহ্য করার চেষ্টা করবে। কিন্তু যদি এর চেয়েও বেশি হয়, তাহলে কোম্পানিকে কিছু খরচ গ্রাহকের কাঁধে চাপিয়ে দিতে হতে পারে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতির অংশ হিসেবে চীনের ওপরে “পারস্পরিক” শুল্ক আরোপের ঘোষণা ইতোমধ্যে প্রযুক্তি খাতকে বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। যদিও কিছু ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর ছাড় রয়েছে, তথাপি ফেন্টানিল ইস্যুতে চীনের ভূমিকার কারণে অ্যাপলের জন্য অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্কের বোঝা রয়েছে।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন খাতে বৈশ্বিক নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার ট্রাম্প প্রশাসনের চেষ্টায় প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আর এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ভোক্তাদের জন্য আইফোনের দাম হয়ে উঠবে অনেকের নাগালের বাইরে।