চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এক গুরুতর সতর্কসংকেত হয়ে উঠেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ০.৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অথচ আগের প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল ২.৪০ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে দেশটি একটি পূর্ণাঙ্গ মন্দার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য স্বল্পমেয়াদি এই মন্দাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদে আমরা দারুণ কিছু করব। সাময়িকভাবে সংকট থাকলেও, ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।”
তবে এই সংকোচনের জন্য মূলত ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নীতিকেই দায়ী করা হচ্ছে। তিনি এপ্রিল মাসে বিশ্বজুড়ে পণ্য রপ্তানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। যদিও দেশ–বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ে পরে ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করেন, তবুও চীনা পণ্যে উচ্চ শুল্ক বহাল রেখেছেন।
এই বাণিজ্যনীতি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রথম প্রান্তিকে ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুত করেছেন, কমেছে ভোক্তাব্যয়, যার ফলে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। অথচ অর্থনীতিবিদেরা আশা করেছিলেন, বছরের শুরুটা হবে শক্তিশালী।
বৈশ্বিক প্রভাবও পড়ছে
যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক পতনের ছায়া পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। রয়টার্সের এক জরিপ অনুযায়ী, ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ আশঙ্কা করছেন, বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি এখন অনেকটাই বেড়ে গেছে। মার্কিন বাণিজ্যনীতিকে এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
বিশ্লেষক টিমোথি গ্রাফ বলেছেন, “সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও কূটনৈতিক চুক্তিগুলোর প্রতি আস্থায় চিড় ধরেছে। ফলে নতুন করে আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন।”
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও এখন আবার উচ্চ শুল্কের কারণে দাম বাড়ছে বিভিন্ন খাতে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলাপ-আলোচনা
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়েই নিজেদের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করছে। ট্রাম্প সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তারা চীনের সঙ্গে ‘ন্যায্য বাণিজ্যচুক্তি’ চায়। চীনও ইতোমধ্যে কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কে ছাড় দেওয়া শুরু করেছে।
বলা হচ্ছে, চীন গোপনে এমন একটি তালিকা তৈরি করছে, যেখানে শুল্ক ছাড়ের আওতায় আসা পণ্যের নাম রয়েছে। বাণিজ্য উত্তেজনা কমিয়ে আনতে উভয় পক্ষের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
তবে সংকট কাটিয়ে উঠতে কতটা সময় লাগবে, কিংবা নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ কতটা ভয়াবহ হবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে এটুকু স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতি একটি অনিশ্চিত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।