যশোর শহরের শংকরপুর এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ বছরের এক শিশু। আহত হয়েছে তার ভাই, যিনি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। সোমবার সকালে বাড়ির পাশের কলাবাগানে খেলার সময় কুড়িয়ে পাওয়া একটি বোমাকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু খাদিজাতুল কুবরা (৫) ও আহত সজীব আহম্মেদ সম্পর্কে ভাইবোন।
তাদের বাবা শাহাদাত হোসেন অটোরিকশাচালক। দুর্ঘটনার সময় শিশু দুটি বাড়ির পাশে খেলছিল। ছোট বোন আয়েশা সুলতানা (৩) ছিল মায়ের কোলে। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে মা দৌড়ে গেলে পথেই পড়ে গিয়ে আহত হন আয়েশা।
চিকিৎসার জন্য দ্রুত যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয় দুই ভাইবোনকে। খাদিজার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে গোপালগঞ্জ পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে, সজীবের একটি হাত বিস্ফোরণে উড়ে যায় এবং পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসে।
হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করতে থাকা ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন বাবা শাহাদাত হোসেন। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, “কুড়িয়ে পাওয়া এক বোমার বিস্ফোরণে মেয়েকে হারালাম। ছেলেটার কি হবে জানি না। বাবা হয়ে এই কষ্ট কেমনে সহ্য করব!”
যশোর জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম জানান, খাদিজার পেটের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আর সজীবের হাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কেটে ফেলতে হয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, সকালে সজীব মাঠে খেলছিল। হঠাৎ সে একটি টেপমোড়ানো কৌটা কুড়িয়ে পায়। সেটি বাসায় এনে বোনের সঙ্গে বল হিসেবে খেলছিল। কিছুক্ষণ পরেই সেটি বিস্ফোরিত হয়, ফলে ঘটনার শিকার হয় দুই ভাইবোন।
বিস্ফোরণের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, “বোমার বিস্ফোরণে দুই শিশু গুরুতর জখম হয়, যার মধ্যে একজন মারা গেছে। মৃতদেহটি মর্গে রাখা হয়েছে। কৌটাটি কী ধরনের বিস্ফোরক ছিল এবং কোথা থেকে এসেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে—শহরের মধ্যে কীভাবে এমন বিপজ্জনক বোমা পড়ে থাকতে পারে। দ্রুত ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।