মৌলভীবাজারে ৯০ কেজির তিনটি বাগাড় মাছ বিক্রি, মাইকে ডাক ‘আউক্কা, দেখউক্কা, লউক্কা’

News Desk

মৌলভীবাজারে ৯০ কেজির তিনটি বাগাড় মাছ বিক্রি, মাইকে ডাক ‘আউক্কা, দেখউক্কা, লউক্কা’. Dhakainlight.com

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় শিশু পার্ক চত্বরে গতকাল সন্ধ্যায় দেখা গেল ভিন্ন চিত্র—মাছের ঝুড়ির ওপর বিশাল তিনটি বাগাড় মাছ রাখা, পাশে মাইকে ঘোষণা, “আউক্কা, দেখউক্কা, লউক্কা!” আশপাশের লোকজন থমকে দাঁড়ালেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ফেসবুকে লাইভ করছেন, কেউ আবার দরদাম করতেও এগিয়ে আসছেন।

বিক্রেতার দাবি অনুযায়ী, মাছ তিনটির ওজন মিলিয়ে প্রায় ৯০ কেজি। এর মধ্যে একটি মাছের ওজন ৬০ কেজির বেশি, বাকিগুলো প্রায় ৩০ কেজির মতো। প্রতিটি কেজি ১ হাজার ১০০ টাকা দরে মাছগুলো কেটে বিক্রি করা হয়।

এই বিশাল আকৃতির মাছ বিক্রি করছিলেন মৌলভীবাজারের শেরপুরের শামীম মিয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, রোববার রাতে কুশিয়ারা নদীতে ‘উতরা’ নামের বিশেষ জালে মাছগুলো ধরা পড়ে। তিনিসহ আরও দুজন মিলে মাছগুলো কিনে আনেন। ঠিক কত টাকায় কিনেছেন, তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

শামীমের ভাষ্য, “মাছগুলা প্রজননের লাইগা মেঘনা থিকা কুশিয়ারায় ঢুকছে। এইরকম বড় মাছ কয়দিন পরপর পাই। এর আগে কুলাউড়ায় দুইডা বাগাড় বিক্রি করছি—৪০ কেজি ওজন আছিল প্রতিটার। তিন-চার বছর আগে ১২০ কেজির একডা পাইছিলাম, শেরপুরের পৌষসংক্রান্তির মেলায় বিক্রি করছি।”

তবে আইনের চোখে এই মাছ ধরা, পরিবহন ও বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ। ২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে বাগাড়কে সংরক্ষিত বন্য প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, এমন মাছ শিকার বা বিক্রির দায়ে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

মাছ দেখতে আসা তরুণ অজিত দেবনাথ বলেন, “এত বড় মাছ জীবনে প্রথম দেখলাম। ছবি তুলে রাখছি, বন্ধুদের দেখাব।”

বিক্রেতা শামীমকে প্রশ্ন করা হয়—তিনি জানেন কি না যে বাগাড় ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ? উত্তরে তিনি বলেন, “সব সময়ই তো বিক্রি করছি। কোনো সমস্যা হয়নি কখনো।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন বিভাগের জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন বলেন, “বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযান চালাতে হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লাগবে। ইউএনও সাহেবের সঙ্গে কথা বলব।”

প্রশ্ন উঠছে, যখন সরকার সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাগাড়কে, তখন এমন মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে কীভাবে? স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হওয়া জরুরি বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।

Footer Section