মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার দেওয়ানকান্দি গ্রামে ভয়াবহ এক পারিবারিক সহিংসতায় স্বামীর হাতে প্রাণ গেল সেলিনা বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূর। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, স্বামী সুজন মোল্লা (৪৩) চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করেন।
নিহত সেলিনা বেগমের বাড়ি একই উপজেলার বকুলতলা গ্রামে। তিনি গোলাম মোস্তফার মেয়ে। পারিবারিকভাবে এক বছর আগে সেলিনার সঙ্গে সুজন মোল্লার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই দাম্পত্য জীবনে কলহ লেগেই ছিল।
স্থানীয়রা জানান, সুজন একজন মাদকাসক্ত এবং প্রায়ই রাতে বাড়ি ফিরতেন দেরিতে। স্ত্রী সেলিনাকে নিয়ে পরকীয়ার সন্দেহ পোষণ করতেন তিনি। এসব বিষয় নিয়ে প্রায়ই দাম্পত্য কলহ হতো এবং সেলিনাকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হতো। এক সপ্তাহ আগে বড় ঝগড়ার পর সেলিনা বাবার বাড়ি চলে যান। পরে স্থানীয় মুরুব্বিদের হস্তক্ষেপে তিনি আবারও স্বামীর বাড়িতে ফেরেন।
ঘটনার দিন রাতে আবারও দুজনের মধ্যে তীব্র ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে সুজন চাপাতি দিয়ে স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পুলিশ পরে গিয়ে সেলিনার মরদেহ উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
সেলিনার বড় বোন শিল্পী আক্তার বলেন, “বিয়ের পর থেকে বোনের জীবনে শান্তি ছিল না। স্বামী প্রায়ই মারধর করত। মানুষ কী বলবে সেই ভয়েই বোন ফিরে গিয়েছিল স্বামীর কাছে। শেষ পর্যন্ত সেই স্বামীই তাঁকে খুন করল।”
পুলিশ জানায়, হত্যার পর সুজন মোল্লা পালিয়ে যান এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় এলাকায় আত্মগোপন করেন। সেখান থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বিষপান করেন, তবে তিনি বেঁচে যান এবং বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিল্টন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুজন স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, পরকীয়া সন্দেহ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পুলিশ মামলার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।