মজুত হচ্ছে খাবার ও ওষুধ, রাত কাটছে বাংকারে
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষাপটে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। যুদ্ধের আশঙ্কায় বহু মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ কেউ রাত কাটাচ্ছেন পাহাড়ের গুহা বা মাটির নিচে তৈরি করা বাংকারে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে খাবার, রান্নার গ্যাস, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত করার হিড়িক।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলার মাধ্যমে শুরু হয় এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ভারত দাবি করেছে, কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার প্রতিশোধে তারা পাকিস্তানের ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’য় আঘাত হানে। যদিও পাকিস্তান এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে হামলার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভারতের পাঞ্জাব, জম্মু, ও কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের লাহোর, নীলম উপত্যকা ও মুজাফফরাবাদ অঞ্চলে চলছে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের গোলাগুলি। এই পরিস্থিতিকে দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পাঞ্জাবের অমৃতসরে বসবাসকারী ২৬ বছর বয়সী অমনপ্রীত ধীল্লন জানান, সীমান্ত থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে তাঁদের গ্রামে এখন নারী ও শিশুরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে অনেকেই খাবার ও ওষুধ মজুত করে রাখছেন ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবেলায়।
পাকিস্তানের লাহোরে আতঙ্কে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। বাসিন্দারা দোকান থেকে এক মাসের রসদ, গ্যাস সিলিন্ডার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে রেখেছেন। স্থানীয় প্রশাসন কৃত্রিম সংকট রোধে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছে, তবে পণ্যের দাম ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বমুখী।
ভারতের অমৃতসরের বাসিন্দা পঙ্কজ শেঠ বলেন, ‘‘কাল দোকান খোলা থাকবে কি না জানি না, তাই পরিবারের জন্য এখনই যা লাগে সব কিনে নিচ্ছি।’’ অন্যদিকে নার্স নভনীত কউর জানান, আটারির কাছাকাছি তাঁর খালার বাড়ির জন্য তিনি বিশেষভাবে পণ্য বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন।
কাশ্মীরের উরি, জম্মু ও বারামুল্লা অঞ্চলে গোলাবর্ষণের তীব্রতা এতটাই বেশি যে মানুষ রাতে বাড়ি ফেলে পাথরের আড়াল বা বাংকারে রাত কাটাচ্ছেন। পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জুরা বান্দি গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুর আহমেদ জানান, ‘‘আমরা নিজেরাই পাহাড়ে বাংকার খুঁড়ে নিচ্ছি, কারণ ভারতীয় হামলার ভয় প্রতিদিন ঘিরে ধরছে।’’
এদিকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহল পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে। যুদ্ধের সম্ভাবনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন শক্তিধর দেশ। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন হামলা এবং পরমাণু অস্ত্র ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রস্তুতির খবর।
দুই দেশের সাধারণ মানুষের এই মানবিক দুরবস্থার মাঝেই কূটনৈতিক আলোচনার কোনো পথ খোলা থাকে কি না, এখন সেটিই দেখার বিষয়। এই মুহূর্তে সীমান্তে যুদ্ধ নয়, বরং সবচেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে মানবিক সহায়তা এবং সর্বোপরি শান্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ।