২০২৫ সালের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বৈরিতা নতুন এক সংঘাতময় মোড় নিয়েছে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই উত্তেজনা এখন ড্রোন হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে, মানুষ বাংকারে রাত কাটাচ্ছে, এবং যুদ্ধের আশঙ্কায় খাবার ও ওষুধ মজুত করছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় “অপারেশন সিঁদুর” নামের একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে পাকিস্তানের ভেতরে কিছু সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এর জবাবে পাকিস্তান শুরু করে “অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস”। এই নামটি এসেছে কোরআনের একটি আয়াত থেকে যার অর্থ “গলিত সিসা দিয়ে গড়া প্রাচীর”। পাকিস্তান এই অভিযানে ভারতের তিনটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানোর দাবি করে।
পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, ভারতের পাঠানো ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মজুতাগার, পাঠানকোট ও উধমপুর বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, তারা পাকিস্তানের পাঠানো সশস্ত্র ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে এবং পাল্টা হামলায় পাকিস্তানের নূর খান, মুরিদ ও শোরকোট ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। ভারতের জম্মু অঞ্চলে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন রাজৌরি জেলার অতিরিক্ত জেলা উন্নয়ন কমিশনার। উরির বেশ কিছু গ্রামে গোলার আঘাতে বসতঘর ধ্বংস হয়েছে।
এই ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির (NCA) জরুরি বৈঠক ডাকেন। এই সংস্থা পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের বৈঠক একটি অঘোষিত পারমাণবিক সতর্কবার্তা দেয়। আসফান্দিয়ার মির, স্টিমসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক বলেন, “এটি যুদ্ধের ঝুঁকি অনেক উঁচু স্তরে নিয়ে গেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে ফোন করে পরিস্থিতি শান্ত করতে আহ্বান জানান। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের সংঘাত এড়াতে কূটনৈতিক আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আতঙ্ক চরমে। ভারতীয় পাঞ্জাব ও পাকিস্তানের লাহোর অঞ্চলে খাবার, ওষুধ ও রান্নার গ্যাস মজুত করতে দেখা গেছে। লাহোরের বাসিন্দা আরুশা রামিজ বলেন, “আমি এক মাসের খাবার মজুত করেছি—মাংস, চা, ডাল, তেল—সবই কিনে রেখেছি।”
কাশ্মীরের বাসিন্দা বশির আহমদ বলেন, “জীবনে কখনো এত তীব্র গোলাবর্ষণ দেখিনি। মানুষ গ্রাম ছেড়ে বাংকারে আশ্রয় নিচ্ছে।”
উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ৩২টি বিমানবন্দর থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। পাকিস্তানও আকাশসীমা বন্ধ রেখেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে যে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ভারত-পাকিস্তানের এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ রেখা ছাড়িয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রচার মাধ্যমে রূপ নিচ্ছে একধরনের তথ্যযুদ্ধে। পাকিস্তান একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে—ভারতের হামলায় নিহত শিশুদের নাম লেখা ব্যানার ঝোলানো হয়েছে সামরিক যানগুলোতে। ভারতীয় মিডিয়া পাল্টা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অভিযান সন্ত্রাসবিরোধী হিসেবে তুলে ধরে।
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এই উত্তেজনা কোথায় গড়াবে? সামরিক সংঘাত কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে? না কি আন্তর্জাতিক কূটনীতি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তা শুধু দক্ষিণ এশিয়াই নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই ভয়াবহ হবে। কারণ, দুটি দেশেরই রয়েছে কার্যকর পারমাণবিক অস্ত্র। অতএব, প্রতিটি মুহূর্তই এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৫ সালের মে মাসের ভারত-পাকিস্তান সংঘাত শুধু একটি সামরিক দ্বন্দ্ব নয়—এটি একটি মানবিক, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংকট। এখন সময় এসেছে, দুই দেশের নেতৃত্ব, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রতিটি সচেতন নাগরিককে এগিয়ে এসে শান্তি নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। যুদ্ধ নয়, শান্তিই হোক এ উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ।