ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত নিয়ে টানাপোড়েন চললেও, সাম্প্রতিক সময়ে এই বিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে ‘নামসংঘাত’–এর মাধ্যমে। অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানের নাম চীন একতরফাভাবে পরিবর্তন করে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারতও কূটনৈতিকভাবে জবাব দিচ্ছে।
চীন সম্প্রতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের ২৭টি স্থানের নাম পরিবর্তন করে চীনা ভাষা, তিব্বতি ও পিনইন রূপে প্রকাশ করেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে পাহাড়, নদী, হ্রদ ও আবাসিক এলাকা। চীন এসব স্থানকে ‘জাংনান’ হিসেবে চিহ্নিত করে দাবি করেছে, এটি তিব্বতের অংশ। পাশাপাশি মানচিত্রে স্থানাঙ্কসহ সব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাফ জানিয়েছেন, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং চীনের এই নামকরণ নিরর্থক ও অযৌক্তিক। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে নাম বদলে বাস্তবতা পাল্টানো যাবে না।’
এই নামসংঘাত নতুন নয়। ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত চীন ধাপে ধাপে অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানের নাম পরিবর্তন করে আসছে। ২০১৭ সালে ৬টি, ২০২১ সালে ১৫টি, ২০২৩ সালে ১১টি এবং ২০২৪ সালে ৩০টি স্থানের নাম পরিবর্তন করা হয়। এবার আরও ২৭টি জায়গার নাম পাল্টেছে।
ভারতের পক্ষ থেকেও পাল্টা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভারত সরকারের ‘ওয়ার হিস্টরি’ বিভাগ চীনের বিভিন্ন স্থানের সংস্কৃত নাম ঠিক করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সেই উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এশিয়াটিক সোসাইটিকে তিব্বতের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নাম খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের এই নামকরণ যুদ্ধ সীমান্ত সংকটের একটি নতুন রূপ। যদিও এখনো কোনো সামরিক সংঘর্ষ হয়নি, তবে এই ঠান্ডা লড়াইয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েন ক্রমশ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মহলও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।