ট্রেনের চাকা থেমেছিল গতকাল রাতেই। ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের বামনকান্দা এলাকায় হঠাৎ করেই থেমে যায় ঢাকা থেকে খুলনাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস। কারণ—সিগন্যাল বিভ্রাট ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ট্রেনটির ইঞ্জিন ও লাগেজ বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে রেললাইনের পাশে। এ ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে।
রাত বাড়লেও সমাধান আসে না। অবশেষে টানা ১৩ ঘণ্টা চেষ্টার পর আজ শনিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে আবার সচল হয় রেল চলাচল। মেরামতের পর অন্য একটি ইঞ্জিন লাগিয়ে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনার উদ্দেশে যাত্রা করে। লাইন মেরামত শেষে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও, এই একটি ঘটনার কারণে ভেঙে পড়ে খুলনা-রাজবাড়ী-ঢাকা রুটের সময়সূচি।
ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনের স্টেশনমাস্টার সুমন মৃধা জানান, দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করা হয়। লাইনচ্যুত বগিগুলো সরানো ও ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতে বেশ সময় লেগেছে। তবে সৌভাগ্যক্রমে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
তবে রেললাইন মেরামতের সেই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে হাজারো যাত্রীকে পড়তে হয় দুর্ভোগে। কেউ কেউ রেলস্টেশনে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, আবার কেউ রাস্তা ধরেন খুলনার পথে। চোখেমুখে তখন ক্লান্তি, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তা।
দুর্ঘটনার প্রভাব পড়েছে অন্য ট্রেনগুলোর চলাচলেও। খুলনা-ঢাকা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের পাঁচ ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ভাঙ্গা অতিক্রম করে। একইভাবে নকশিকাঁথা ট্রেনটি সকাল ৫টা ৩০ মিনিটে রাজবাড়ী থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও, সেটি আড়াই ঘণ্টা দেরিতে সকাল ৮টার দিকে রওনা হয়।
ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনের উপপরিদর্শক খাইরুজ্জামান শিকদার বলেন, “লাইনচ্যুত হওয়ার ফলে যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কেউ কেউ পুরো রাত অপেক্ষা করলেও, অনেক যাত্রী রাতেই সড়কপথে খুলনার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন।”
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস রাত ৮টার দিকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসে। ট্রেনটির রাত ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনা পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু ভাঙ্গা জংশনে স্বাভাবিক যাত্রাবিরতির পর ট্রেনটি যখন আবার রওনা হয়, তখন সেটি খুব বেশি দূর যেতে পারেনি। জংশন ছাড়ার এক কিলোমিটার পরেই লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে ইঞ্জিন ও একটি বগি।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে সিগন্যাল ত্রুটি ও যান্ত্রিক সমস্যাকেই দায়ী করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। তবে তদন্তের পর পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
এই ধরনের দুর্ঘটনা শুধু রেললাইন মেরামতের বিষয় নয়, বরং এতে হাজার হাজার যাত্রীর সময় নষ্ট হয়, ব্যাহত হয় পরিকল্পনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় আস্থার জায়গাও। রেল কর্তৃপক্ষের দ্রুত সাড়া এবং তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও, বারবার এমন ঘটনা এই রুটের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।