ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং তা পর্ষদ গ্রহণও করেছে। তাঁর মেয়াদ ছিল আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত, তখন তাঁর বয়স ৬৫ পূর্ণ হতো। কিন্তু তার আগেই এই হঠাৎ পদত্যাগ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সেলিম আর এফ হোসেন ২০১৫ সালের নভেম্বরে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে ছয় বছর তিনি আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এমডি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ব্র্যাক ব্যাংক করপোরেট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে, যা ব্যাংকটিকে দেশের অন্যতম লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে।
তাঁর পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, “স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আপাতত কোথাও যোগ দিচ্ছি না, ছুটি কাটাব।” জানা গেছে, তিনি একমাত্র ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশ নিতে আজ কানাডা যাচ্ছেন।
তবে অভ্যন্তরীণ সূত্র ও ব্যাংক খাতের একাধিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানান, তাঁর পদত্যাগের পেছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি এবং অভ্যন্তরীণ কিছু মতবিরোধ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করেন। এর পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শীতল হতে থাকে। ব্যাংকটির কিছু ফাইল আটকে দেওয়া, পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করা এবং বিভিন্ন ব্যাংকিং ফোরামে তাঁকে এড়িয়ে চলার মতো ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্যের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ এবং আরেক পরিচালকের নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এসব ঘটনাই তাঁর পদত্যাগের পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেলিম আর এফ হোসেন কর্মীদের উদ্দেশে এক চিঠিতে বলেন, “সব ভালো জিনিসেরই একটি শেষ আছে। ব্র্যাক ব্যাংকে আমার সময়েরও সমাপ্তি এসেছে। প্রায় ১০ বছর আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত। এই সময় আমরা একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি, যা ব্যাংকিং শিল্পে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত।”
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মেহেরিয়ার এম হাসান কর্মীদের উদ্দেশে আলাদা এক বার্তায় জানান, ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রেফাত উল্লাহ খানকে অন্তর্বর্তীকালীন এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সেলিম আর এফ হোসেনের এই পদত্যাগে দেশের ব্যাংকিং খাতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যাংকার হিসেবে তাঁর আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। তাঁর এই হঠাৎ বিদায়কে ব্যাংক খাতের জন্য এক প্রকার ক্ষতিই মনে করছেন অনেকে।