১৩ বছর আগে বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী ‘গুম’ হওয়ার প্রতিবাদে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে হামলার ঘটনায় অবশেষে মামলা হয়েছে। এই দীর্ঘ সময় পরে দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে পুলিশ সদস্যরাও অভিযুক্ত হয়েছেন। মামলায় নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ১০৫ জনকে, এবং অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপি কর্মী হাবিবুর রহমান (৪৭) মামলাটি দায়ের করেন। বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও গতকাল বুধবার রাতে তা প্রকাশ্যে আসে। মামলাটি সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী হাসান আহমেদ পাটোয়ারী। তিনি জানান, আদালত জানতে চেয়েছে—এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অতীতে কোনো মামলা হয়েছে কি না। সে বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে বিশ্বনাথ থানার ওসিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বনাথ পৌরসভার সাবেক মেয়র মুহিবুর রহমান, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া, বিশ্বনাথ থানার তৎকালীন ওসি আবুল কালাম আজাদ, তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) চাঁন মিয়া এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান আসাদসহ আরও অনেকে।
এজাহারে বাদী নিজেকে একজন কৃষক এবং বিএনপির সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য মতে, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলীকে তৎকালীন সরকার গুম করে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে ২৩ এপ্রিল বিশ্বনাথে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। কিন্তু ওই মিছিলের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায় এবং একই সময়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে মিছিলকারীদের ওপর।
বাদী আরও দাবি করেন, বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে দেশে আইনের শাসনের প্রতি আস্থা ফিরে এসেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ‘পলায়নের’ মধ্য দিয়ে তাঁর সরকারের পতন ঘটে, এবং এতে দেশে ন্যায়বিচারের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয় বলেই তিনি এই মামলা করতে পেরেছেন।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানী ঢাকার বনানী এলাকা থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন এম ইলিয়াস আলী। বিএনপি শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁকে গুম করেছে। ইলিয়াস আলীর সন্ধান চেয়ে সেই সময় বিশ্বনাথে টানা এক সপ্তাহ হরতাল পালিত হয়। হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল ও যুবদলের তিন কর্মী নিহত হন। বিএনপি ও ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’ এরপর থেকে তাঁর সন্ধানে বিভিন্ন আন্দোলন ও কর্মসূচি চালিয়ে আসছে।
সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনে তিনবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এম ইলিয়াস আলী। এর মধ্যে তিনি দুইবার বিজয়ী হন। তিনি বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
এই মামলার মাধ্যমে ১৩ বছর পর ইলিয়াস আলীর গুম–পরবর্তী ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো কি না—তা এখন দেখার বিষয়। তবে এতে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে একটি পুরোনো, কিন্তু জাতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে।