দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। নির্বাচনপূর্ব সময়কালে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে দুই দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে স্পষ্ট বিভাজন, যা এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের অনেক জায়গায় প্রশাসন এখন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে এবং এমন প্রশাসনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর’ বা ‘পলিটিক্যাল রেটরিক’ হিসেবে অভিহিত করেছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে বরং বৈষম্যবিরোধীদেরই (ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন শক্তি) সখ্যতা সবচেয়ে বেশি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “তাহলে এখন এটা বিএনপির প্রশাসন হলো কী করে?”
নাহিদ ইসলাম নিজেও কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। সেই পদ থেকে পদত্যাগ করে বর্তমানে তিনি এনসিপির নেতৃত্বে রয়েছেন। তার এই নতুন অবস্থান থেকে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “পরবর্তীতে ক্ষমতায় কে আসবে, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র সে অনুযায়ী কাজ করে।” তিনি আরও বলেন, “বড় দল হিসাবে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকায় প্রশাসন তাদের সঙ্গে একধরনের দর কষাকষিতে নেমেছে।”
আদীব আরও দাবি করেন, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম বিএনপি সুপারিশ করেছিল, তাই নির্বাচন কমিশনও বিএনপিপ্রধান আচরণ করছে। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের সুপারিশ বিবেচনায় না নিয়ে এখনও ফ্যাসিবাদী আমলের আইন অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে।
অন্যদিকে, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানও নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে রাজনৈতিক মন্তব্য হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “উনি একটা দলের নেতা, তাই রাজনৈতিক বক্তব্য দিতেই পারেন। তবে বাস্তবতার বিচারে এখনো সরকারের ভেতরে এনসিপির প্রতিনিধি রয়েছে। প্রশাসনের দায়িত্ব, বদলি, পদোন্নতি, সবকিছুই এই সরকারের আওতায় চলছে। যদি প্রশাসন বিএনপি-ঘেঁষা হয়ে থাকে, তার দায়ও সরকারের।”
বিএনপি তাদের অবস্থানে অনড় থেকে বলছে, নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন এবং এই সরকারের অধীনেই দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত। অপরদিকে, এনসিপি সংস্কার শেষ না করে কোনো নির্বাচন চায় না। এই পার্থক্য দুই দলের মধ্যে আরও দূরত্ব সৃষ্টি করছে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “বর্তমানে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। চাঁদাবাজির মতো অপরাধেও তারা নিরব ভূমিকা পালন করছে। এই পরিস্থিতিতে একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্ভব নয়।”
এদিকে, সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন সত্যিই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারবে কিনা, নাকি এই দ্বন্দ্ব আরও গভীর হয়ে রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।
ঢাকা ইন লাইট ডট কম