জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করছে, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়াকে কেন্দ্র করে পরিপক্বতা (ম্যাচিউরিটি) দেখাচ্ছে না। একই সঙ্গে, সংকটের জন্য নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করেছে দলটি।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকাণ্ডে তাদের আস্থা নেই। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানান তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “এখন যেটা হচ্ছে, একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠিত দল হিসেবে জনগণ যে পরিপক্বতা আশা করে, তারা সেটা দেখাচ্ছে না। শাহবাগ বন্ধ হচ্ছে, নগর ভবন বন্ধ হচ্ছে, যমুনা ঘেরাওয়ের হুমকি দেওয়া হচ্ছে—নানাভাবে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা হচ্ছে। সবাইকেই এই জায়গা থেকে সরে আসা উচিত।”
তিনি অভিযোগ করেন, ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা সরাসরি ইসির সৃষ্টি। ইসি মামলায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি এবং আপিলও করেনি। এতে বোঝা যাচ্ছে, ইসি একটি নির্দিষ্ট দলের পক্ষ নিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, আগামীকাল বুধবার দুপুর ১২টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে এনসিপি ঢাকা মহানগর শাখা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। নাহিদ ইসলাম বলেন, “তাঁকে (এজাজ) একটি সংগঠনের ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি প্রশাসকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন, কারণ তাদের অবৈধ দাবিদাওয়ার সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “সরকারের উচিত এ বিষয়ে তদন্ত করা এবং যদি অভিযোগ মিথ্যা হয়, তাহলে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।
সংবাদ সম্মেলনে নাসীরুদ্দীন বলেন, “ইসি দলীয় মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনের গঠনপ্রক্রিয়াও অবৈধ। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের আগেই তারা মন্তব্য করে থাকে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের লাগাতার আন্দোলনে পুরো ঢাকা শহরের নাগরিক সেবা ভেঙে পড়েছে। নগর ভবন অচল হয়ে গেছে, জনগণ কোনো সেবা পাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে বলা হয়, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের “অবৈধ নির্বাচন” কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, “ইশরাক হোসেন বনাম শেখ ফজলে নূর তাপস গং” মামলার বিবাদী হয়েও নির্বাচন কমিশন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি, একতরফা রায় হয়েছে। ইসি উচ্চ আদালতে প্রতিকার না চেয়ে মামলার বাদীকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে।
এনসিপির দাবি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। তবে তা বাস্তবায়নের আগে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন অপরিহার্য।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা কখনোই জাতীয় নির্বাচনের বিরোধিতা করিনি। প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া সময়সীমা (ডিসেম্বর থেকে জুন) মেনেই বলছি—এর মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে তার আগে বিচার ও সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজনে জাতীয় ও গণপরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হোক, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন হোক।”
তিনি যোগ করেন, “স্থানীয় নির্বাচনই নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তুতি কতটা কার্যকর। ফলে দ্রুত ইসি পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়া এখন সময়ের দাবি।”
4o