সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার এক তরুণ মিঠুন চন্দ্র ওঁরাও বাবার রেখে যাওয়া হাঁসের খামারকে ঘিরেই নতুন করে জীবন সংগ্রামে নেমেছেন। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি হাঁসের খামার চালিয়ে পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।
মিঠুনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের গুড়পিপুল গ্রামে। বর্তমানে তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার একটি কলেজে স্নাতক (পাস) শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন।
গত রোববার তাঁর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, উঠোনজুড়ে হাঁসের বাচ্চা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মিঠুন নিজ হাতে তাদের খাবার দিচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে খেয়াল রাখছেন তাঁর মা পদ্মমণি রানী ওঁরাও।
মিঠুন জানান, তাঁর বাবা গজেন্দ্রনাথ ওঁরাও একসময় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এনজিও) চাকরি করতেন। পাশাপাশি বছর আটেক আগে হাঁসের বাচ্চা পালন শুরু করেন। ২০২৪ সালে তাঁর অকাল মৃত্যু ঘটে। এরপর থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয় মিঠুনকে। মা এবং ছোট বোনকে নিয়ে এখন তিনিই পারিবারিক দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাঁর বোন চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
বর্তমানে তাঁদের খামারে প্রায় ৮০০টি হাঁসের বাচ্চা রয়েছে। প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা ৩৭ টাকা করে কেনা হয়েছে। প্রায় তিন মাস লালন-পালনের পর এগুলো বিক্রির উপযোগী হয়, তখন প্রতিটির মূল্য দাঁড়ায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। মিঠুন জানান, হাঁসের যত্নে তিনি স্থানীয় পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে থাকেন এবং সময়মতো টিকা প্রদান করেন। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ পেলে আরও ভালোভাবে খামারটি পরিচালনা করতে পারব।”
মিঠুনের মা পদ্মমণি রানী বলেন, “স্বামীর অসমাপ্ত উদ্যোগ এখন আমাদের জীবনভর অবলম্বন হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর হাঁসের সংখ্যা বাড়ছে, আমরাও ভালো আছি।”
তাড়াশ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, “উপজেলায় চার শতাধিক মানুষ হাঁস পালন করছেন। প্রতি বাড়িতেই ৫০০ থেকে ৯০০টি করে হাঁসের বাচ্চা লালন-পালন করা হচ্ছে। এটি একটি লাভজনক উদ্যোগ। যেকোনো প্রয়োজনে আমরা খামারিদের পাশে আছি।”
মিঠুনের এই সাহসী পদক্ষেপ এবং নিরলস পরিশ্রম শুধু তাঁর পরিবারের জন্য নয়, স্থানীয় তরুণদের জন্যও এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি সরকারের সহায়তা পেলে আরও বড় পরিসরে খামার পরিচালনা করতে চান বলে জানান।