বিশ্বব্যাপী কলোরেক্টাল ক্যানসার অন্যতম গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন—এমনটিই উঠে এসেছে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনায়। ২১ মে অনুষ্ঠিত এই আলোচনার আয়োজন করে এসকেএফ অনকোলজি, যা সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মুকিতুল হুদা। আলোচনার সঞ্চালনায় ছিলেন উপস্থাপক নাসিহা তাহসিন। আলোচনা ঘিরে ক্যানসার রোগ বিশেষ করে কলোরেক্টাল ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা, ঝুঁকি, লক্ষণ, নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়।
ডা. মুকিতুল হুদা জানান, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে তিনজন মানুষ কলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হন। সে হিসাবে প্রায় ২০ কোটি জনসংখ্যার দেশে বছরে অন্তত ৬০ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ হলো মলের রঙ কালো হয়ে যাওয়া, তলপেটে ব্যথা, দুর্বলতা, এমনকি মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়া ও খাদ্যনালীতে বাধা তৈরি হওয়া।”
নির্ণয়ের ক্ষেত্রে স্টুল টেস্ট বা মলের পরীক্ষাকে প্রথম ধাপ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি পরীক্ষায় রক্তের উপস্থিতি পাওয়া যায়, তবে কোলনের সমস্যা থাকার সম্ভাবনা থাকে। এরপর প্রয়োজন হয় আরও জটিল পরীক্ষা, যেমন কোলোনস্কোপি।
ঝুঁকি উপাদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উচ্চচর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাস, তেলেভাজা খাবার, ধূমপান, তামাক গ্রহণ এবং বংশগত কারণ। পরিবারে কেউ যদি কলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা কোলনে পলিপ থাকে, তাহলে অন্য সদস্যদেরও ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে এপিসি জিনের মিউটেশন থাকলে এ ধরনের ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
স্ক্রিনিং সম্পর্কে মুকিতুল হুদা বলেন, যাঁদের পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাঁদের ৪০–৪৫ বছর বয়স থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত। আর যাঁদের এমন কোনো ঝুঁকি নেই, তাঁদের ৫০ বছর বয়স থেকে শুরু করলেই যথেষ্ট। বাসায় বসে স্ক্রিনিংয়ের জন্য এফআইটি (ফিটাল ইমিউনোকেমিক্যাল টেস্ট) নামক একটি কিটের মাধ্যমেও প্রাথমিক ধারণা পাওয়া সম্ভব।
ক্যানসার স্টেজিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “রোগ যত প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, চিকিৎসা তত সহজ ও কম ব্যয়বহুল হয়। রোগী সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে।”
রোগীরা বিদেশে চিকিৎসা নিতে কেন আগ্রহী—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আসলে অনেকে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারেন না বা অনেক কিছু না জেনেই বিদেশে চলে যান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বর্তমানে বাংলাদেশেই আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা, ক্যানসার নির্ণয়ের আধুনিক প্রযুক্তি এবং ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “রোগী যখন প্রথম ক্যানসার শনাক্ত করেন, তখন পরিবারসহ মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েন। এই সময়টাতে চিকিৎসকের উচিত তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, বিশ্বাস জোগানো এবং পরিষ্কারভাবে রোগ ও চিকিৎসার ব্যাখ্যা দেওয়া। এটি একদিকে রোগীর মানসিক শক্তি বাড়ায়, অন্যদিকে দেশের ওপর আস্থা জন্মাতে সহায়তা করে।”
আলোচনার এক পর্যায়ে এসকেএফ অনকোলজির কারখানার আন্তর্জাতিক মান এবং ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানির কথাও উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত অনকোলজি প্ল্যান্ট হিসেবে এসকেএফ অনকোলজি ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
আলোচনার শেষাংশে ডা. মুকিতুল হুদা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়। সচেতনতা, সঠিক সময়ে নির্ণয় এবং আধুনিক চিকিৎসায় ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে—বাংলাদেশেই আছে বিশ্বমানের চিকিৎসা।”