গাজীপুরের টঙ্গীতে এক শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী নারীকে হাত, পা ও মুখ বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় প্রতিবেশী এক দম্পতি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মাত্র ১ হাজার ২৫০ টাকা ও ২ কেজি চাল লুট করতেই তাঁরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে জানিয়েছেন।
গতকাল রোববার বিকেলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন চিফ জুডিশিয়াল আদালতে তারা জবানবন্দি দেন এবং রাতেই তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয় বলে জানান গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আবুল কালাম।
গ্রেপ্তার হওয়া দম্পতি হলেন সাইফুল ইসলাম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (১৯)। তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের বাসিন্দা হলেও গাজীপুরের টঙ্গীর গাজীবাড়ি পুকুরপাড় এলাকায় ভাড়া থাকতেন। নিহত নারী রাবেয়া সাবরিন (২৮) পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার বাসিন্দা এবং টঙ্গীর শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টে কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। তিনিও পুকুরপাড় এলাকায় তাঁর মায়ের সঙ্গে একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন।
ঘটনার দিন ১৯ মে সকালে সাবরিন বাসায় একা ছিলেন। সকাল ৯টার দিকে এক প্রতিবেশী দরজা বাইরে থেকে আটকানো দেখতে পেয়ে সন্দেহ করেন। দরজা খুলে দেখতে পান বিছানার ওপর সাবরিনের মরদেহ, ওড়না ও গামছা দিয়ে তাঁর হাত, পা ও মুখ বাঁধা। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। ঘটনার পর সাবরিনের মা বাদী হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
পরবর্তীতে গাজীপুর পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং সাবরিনের আগের একটি চুরি হওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটে সাইফুল ও সাদিয়াকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, সাইফুল একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন এবং অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিনের বকেয়া বাড়িভাড়াসহ আর্থিক সংকটে ভুগছিলেন তাঁরা।
সাবরিনের বোনাস পাওয়ার খবর জানতে পেরে সেই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। ১৯ মে ভোরে ফাঁকা ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন এবং ব্যাগ থেকে নগদ টাকা ও কিছু চাল নিয়ে পালিয়ে যান।
পিবিআই বলছে, হত্যার দায় স্বীকারের পাশাপাশি জব্দকৃত আলামত এবং মোবাইল ফোনের তথ্যেও অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট হয়েছে। এখন মামলার পরবর্তী ধাপ অনুযায়ী চার্জশিট দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড টঙ্গী অঞ্চলে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রতিবন্ধী ও নিরীহ একজন নারীকে শুধুমাত্র সামান্য টাকার লোভে হত্যা করার এই ঘটনা সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।