পাকিস্তানে হামলা ভারতকে ফেলেছে বড় দ্বিধায়

News Desk

পাকিস্তানে হামলা ভারতকে ফেলেছে বড় দ্বিধায়. Dhakainlight.com

একই দিনে দুটি বিপরীতমুখী ঘটনা ঘটিয়েছে ভারত—একদিকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি বহুপ্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন, অন্যদিকে পাকিস্তানের মাটিতে সামরিক অভিযান। এটি এমন এক সপ্তাহ, যেখানে ভারতের ভবিষ্যৎ ও অতীত একসঙ্গে ধাক্কা দিয়েছে। তিন বছর ধরে আলোচনার পর হওয়া ব্রিটেন-ভারত বাণিজ্য চুক্তি ভারতের একটি উদীয়মান শক্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ হলেও, পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা ভারতকে পুরোনো সংকটের মধ্যে ফিরিয়ে নিয়েছে।

পাকিস্তানের মাটিতে ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারত যে অভিযান চালিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশটি এখনো নিজ আঞ্চলিক অস্থিরতার বেড়াজালে বন্দী। নয়াদিল্লির দাবি, এসব অভিযান কেবল জঙ্গিদের অবকাঠামো লক্ষ্য করে পরিচালিত, সামরিক ঘাঁটিকে নয়। ভারত বলছে, এটি ‘সুনির্দিষ্ট ও সীমিত’ হামলা, যার উদ্দেশ্য প্রতিশোধ নয় বরং সন্ত্রাস দমন। তবু বেসামরিক হতাহতের খবর আসছে, এবং পরিস্থিতি হঠাৎ করে বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে—এমন শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

বর্তমান সংঘাতে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও জোরালো মধ্যস্থতা আসছে না। যুক্তরাষ্ট্র অতীতে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, এখনকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপারটিকে শুধুই ‘হতাশার বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি মনে করছেন, দুই দেশ নিজেরা একটা সমাধানে পৌঁছে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র এখন দক্ষিণ এশিয়ার সংকটকে তার মূল ভূরাজনৈতিক অগ্রাধিকারের বাইরে রাখছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার মূল কারণ কাশ্মীর। এই অঞ্চল নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে, যার মধ্যে দুটি কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তান কাশ্মীরকে তাদের ‘জগুলার ভেইন’ বা জীবনরেখা মনে করে, কারণ সিন্ধু নদের পানি এই অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। ভারতের তরফ থেকে পুরোনো সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করায় পাকিস্তান এটিকে অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখছে।

কাশ্মীরে সম্প্রতি খনিজ পদার্থের খোঁজ মেলায় ভারতের জন্য এই অঞ্চল আরও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালে ভারত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে নেয়। ভারতের দাবি, এতে উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা বেড়েছে, তবে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা ও সামরিক উত্তেজনা প্রমাণ করছে—কাশ্মীর এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ এখনো নিজেদের অধিকার ও পরিচয় নিয়ে অসন্তুষ্ট। দুই দেশের শাসনের আওতায় থাকা কাশ্মীরিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার পর্যটন ও বিনিয়োগের কথা বললেও বাস্তবতা হলো, জনগণের মনে এখনো ক্ষোভ রয়ে গেছে।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব এখনো বহাল। প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টের চেয়ে ক্ষমতা বেশি সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দাপ্রধানের হাতে। পাকিস্তানে কখনোই কোনো প্রধানমন্ত্রী পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। এই বাস্তবতায় ভারত-পাকিস্তান শান্তিপূর্ণ সম্পর্কে পৌঁছাতে না পারলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আধিপত্য আরও মজবুত থাকবে।

এই দ্বন্দ্ব একটি গভীর পরিচয়ের প্রশ্নে গাঁথা। পাকিস্তানে জাতীয় পরিচয়ের এক বড় অংশ গঠিত হয়েছে ভারতবিরোধিতাকে কেন্দ্র করে। অন্যদিকে ভারত চায় নিজেকে একটি উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু প্রতিবেশীর সঙ্গে এই সংঘাত সেই অভিযাত্রার গতি থামিয়ে দিচ্ছে।

এই বিরোধ হুট করে থেমে যাবে, এমন আশাবাদ বাস্তবসম্মত নয়। এটি অনেকটা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বা তাইওয়ান প্রণালি কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের মতো—যেগুলোর মূল শিকড় ইতিহাস আর জাতীয় পরিচয়ের জটিলতায়।

ভারতের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির স্বপ্ন তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে। না হলে, বৈশ্বিক উচ্চতায় ওঠার পথ বারবার বাধাগ্রস্ত হবে।

Leave a Comment

Footer Section