পাকিস্তানে ভারতের অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ কেন রাখা হলো

News Desk

পাকিস্তানে ভারতের অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ কেন রাখা হলো. Dhakainlight.com

পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এবার রূপ নিয়েছে সরাসরি সামরিক সংঘাতে। গতকাল মধ্যরাতের পর পাকিস্তানের ছয়টি ভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’, যা নিয়ে দেশ-বিদেশে তৈরি হয়েছে বিস্তর আলোচনার ঝড়।

‘সিঁদুর’ শব্দটি হিন্দু ধর্মের বিবাহিত নারীদের এক সাংস্কৃতিক চিহ্ন। সাধারণত নারীরা তাদের সিঁথিতে সিঁদুর পরেন, যা তাদের বৈবাহিক জীবনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এ কারণে সামরিক অভিযানের মতো প্রাণঘাতী কর্মকাণ্ডের নাম হিসেবে ‘সিঁদুর’ ব্যবহারের বিষয়টি অনেকের কাছেই বিস্ময়কর ও বিতর্কিত মনে হচ্ছে।

ভারতীয় পক্ষের ব্যাখ্যায় জানা গেছে, এই নামকরণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন ভারতীয় পর্যটক নিহত হন। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং অনেকেই পরিবার-পরিজনসহ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। নিহতদের বিধবা স্ত্রীদের স্মরণে ও প্রতীকীভাবে তাদের ‘সিঁদুর’ মোছা জীবনের প্রতিবাদে এই সামরিক অভিযানকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দেওয়া হয়েছে।

ভারতের দাবি, পেহেলগামের ওই হামলার পেছনে ছিল পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী। সেই সূত্র ধরেই পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে টার্গেট করে চালানো হয়েছে এই অভিযান।

পাকিস্তানের আইএসপিআর-এর মহাপরিচালক আহমেদ শরিফ চৌধুরীর বরাতে জানা গেছে, এই অভিযানে পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৪৬ জন। অন্যদিকে ভারতের দাবি, সীমান্তে পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে তাদের সাতজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি রাফাল, একটি সু–৩০ এবং একটি মিগ–২৯ যুদ্ধবিমান। যদিও ভারত এখনো এ দাবির সত্যতা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি, তবে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্থানীয় সূত্রগুলো রায়টার্সকে জানিয়েছে, তিনটি বিমানের ধ্বংসাবশেষ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে এবং তিনজন পাইলট চিকিৎসাধীন।

এই অভিযানের পর পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হাসপাতাল ও জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু, সাম্বা, কাঠুয়া, রাজৌরি ও পুঞ্চ এলাকাতেও নিরাপত্তার কারণে বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে সব স্কুল-কলেজে।

এখন পুরো উপমহাদেশজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ—এই সংঘর্ষ কী আরও বিস্তৃত হবে, নাকি কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

Leave a Comment

Footer Section