কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শেষ প্রান্তে অবস্থিত সাবরাং সমুদ্রসৈকত এখন দিন দিন পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এক পাশে পাহাড় আর অন্য পাশে বঙ্গোপসাগর—এই অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা সৈকতের নির্জন পরিবেশ, রঙিন ডিঙিনৌকা আর সাগরলতা যেন বাড়তি আকর্ষণ এনে দিয়েছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য।
গত শুক্রবার বিকেলে দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও বহু পর্যটক সাবরাং সৈকতে হেঁটে বেড়াচ্ছেন, কেউবা মেরিন ড্রাইভে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ধারণ করছেন উত্তাল সাগরের দৃশ্য। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে সৈকতের পাশ ঘেঁষে সারি দিয়ে রাখা রঙিন ডিঙিনৌকাগুলোর সঙ্গে ছবি তুলছেন অনেকে। ঢাকার বাড্ডা থেকে আসা নাজনীন সিদ্দিক বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছেন তিনি, কিন্তু এত রঙিন ও শৈল্পিক নৌকা আগে দেখেননি। পর্যটকদের মতে, এই নৌকাগুলোর সৌন্দর্য তাদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
বর্তমানে সাগরে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে, ফলে শত শত ডিঙিনৌকা এখন সৈকতের পাশে অলস পড়ে আছে। তবে এ অলসতাই যেন পর্যটকদের জন্য রঙিন এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে। চট্টগ্রামের রাউজান থেকে আসা সাজ্জাদ হোসাইন জানান, টেকনাফের নৌকাগুলোর ডিজাইন অনেকটা সাম্পানের মতো, তবে রঙের ব্যবহারে এগুলো অনেক বেশি মনকাড়া।
নৌকাগুলোর অধিকাংশ মালিক নিজেরাই এগুলো রঙিন করেন। স্থানীয় আবদুল রহিম বলেন, প্রায় এক যুগ আগে মহেশখালিয়াপাড়ার এক ব্যক্তি শখ করে প্রথম নৌকা রাঙান, তারপর থেকেই এই ধারা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখন প্রায় ৯০ শতাংশ ডিঙিনৌকা রঙিন, যা শুধু নান্দনিকতাই নয়, পর্যটনবান্ধব পরিবেশও সৃষ্টি করেছে।
সাবরাং সৈকতের আশপাশে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট রেস্তোরাঁ, যেমন—আরহাম কমপ্লেক্সে বিচ ভিউ রেস্তোরাঁ, হারুন ভাতঘর-২ ও ঝিনুক ক্যাফে। খাবারের মান, পরিবেশ আর তুলনামূলক কম মূল্যে রান্নার কারণে পর্যটকদের কাছে এই রেস্তোরাঁগুলো জনপ্রিয়।
সৈকত ঘুরে অনেকেই যাচ্ছেন মাথিন কূপ, নাফ নদী তীরবর্তী নেটং পাহাড়, জালিয়ার দিয়া দ্বীপ, কুদুমগুহা বা বন বিভাগের নেচার পার্ক ঘুরে দেখতে। স্থানীয় প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বদা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
কক্সবাজার কলাতলী হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, সাম্প্রতিক দিনে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ভিড় হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত ঘুরে আসছেন।
সার্বিকভাবে বলা যায়, সাবরাং এখন শুধু একটি সৈকত নয়, বরং একটি পর্যটন অভিজ্ঞতার নাম। এখানে সাগর, পাহাড় আর মানুষ মিলে এক অনন্য অভ্যর্থনার আয়োজন করে রাখে প্রতিদিনই।