পবিত্র আল–আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিদের ওপর উগ্র ইসরায়েলিদের হামলা

News Desk

পবিত্র আল–আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিদের ওপর উগ্র ইসরায়েলিদের হামলা. Dhakainlight.com

জেরুজালেম দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী জাতীয়তাবাদীরা জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণসহ মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় আগ্রাসী মিছিল করে এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর সরাসরি হামলা চালায়। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময় পুরোনো জেরুজালেমের অলিগলিতে মিছিলকারীরা ‘আরবদের মৃত্যু হোক’ এবং ‘তোমাদের গ্রাম জ্বলে যাক’—এমন ঘৃণামূলক স্লোগান দিতে থাকে।

আল-আকসা মসজিদ এলাকায় প্রবেশের সময় ইসরায়েলি কট্টরবাদীরা দোকানপাটে হামলা চালায় এবং পথচারী, দোকানদার ও স্কুলপড়ুয়া শিশুদের দিকে বিভিন্ন বস্তু ছুড়ে মারে। এমনকি ইসরায়েলি মানবাধিকারকর্মী ও পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায় কিছু মিছিলকারী। ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির একজন সাংবাদিক জানান, ওই সময় পুলিশ অন্তত দুই ইসরায়েলি তরুণকে আটক করে।

মিছিলকারীদের একটি দল পূর্ব জেরুজালেমে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র একটি কার্যালয়ের ভেতরেও ঢুকে পড়ে। এই দলে ইসরায়েলি পার্লামেন্টের সদস্য ইউলিয়া মালিনোভস্কিও ছিলেন, যিনি সংস্থাটিকে নিষিদ্ধ করা একটি বিতর্কিত আইনের অন্যতম প্রণেতা। ইউএনআরডব্লিউএ’র পশ্চিম তীরের সমন্বয়কারী রোলান্ড ফ্রিডরিশ জানান, ডজনখানেক ইসরায়েলি ইউএনআরডব্লিউএ’র মূল ফটক বেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে এবং পুলিশের সামনেই তা ঘটে।

এদিন সকালে ইসরায়েলের চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরসহ প্রায় দুই হাজার ইসরায়েলি আল-আকসা প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় প্রবেশ করে। বেন-গভির পরে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে জানান, তিনি “যুদ্ধের বিজয়, সব জিম্মির মুক্তি এবং শিন বেতপ্রধানের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা” করছেন। এর আগেও তিনি এই পবিত্র স্থানে পুলিশি সহায়তায় উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।

আল–জাজিরার সাংবাদিক নিদা ইব্রাহিম বলেন, এই মিছিলের মূল উদ্দেশ্য ছিল জেরুজালেম শহরের ওপর ইসরায়েলি দখলদারিত্বের শক্তি জাহির করা। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মিছিলকারীরা ফিলিস্তিনিদের দোকানে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে, বিক্ষোভ করেছে এবং নানা উসকানিমূলক আচরণ করেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখলের পর থেকে শহরটি ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রতিবছর ২৬ মে ‘জেরুজালেম দিবস’ পালনের নামে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় মিছিল করেন এবং হামলা চালান। এ বছরও ব্যতিক্রম ঘটেনি। বরং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।

ফিলিস্তিনিরা মনে করছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু আল-আকসার ধর্মীয় পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ করে না, বরং এটি মুসলিম বিশ্বে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও বাড়িয়ে তোলে। ঘটনাটির পর বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং মুসলিম দেশগুলো থেকে নিন্দা জানানোর আহ্বান উঠেছে। ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

Footer Section