নববর্ষের শোভাযাত্রায় নাম পরিবর্তন, ফিরছে পুরনো ‘আনন্দ’

News Desk

ঢাকা ইন লাইট
বাংলা নববর্ষের অন্যতম প্রধান আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করে এবার রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, “নাম পরিবর্তনের কথা না বলে আমরা বলছি পুনরুদ্ধার। শোভাযাত্রার মূল নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। সেটিই আমরা ফিরিয়ে আনছি, যেখানে সকলের অংশগ্রহণ ছিল, কোনো রাজনৈতিক রূপ ছিল না।”

এবারের শোভাযাত্রা সম্পর্কে জানানো হয়, এটি হবে “সর্ববৃহৎ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ।” অংশ নেবে দেশের ২৮টি জনগোষ্ঠী। আয়োজকদের মতে, শোভাযাত্রাটি হয়ে উঠবে “সকলের শোভাযাত্রা”।

সম্প্রতি ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর আপত্তি ও সামাজিক চাপের প্রেক্ষিতে ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও আয়োজকেরা বলছেন, এ পরিবর্তন রাজনৈতিক নয়, বরং ঐতিহ্যে ফেরা।

শোভাযাত্রায় থাকবে বিভিন্ন প্রতিকৃতি—স্বৈরাচারের দৈত্যরূপ, বড় ইলিশ মাছ, কাঠের বাঘ, শান্তির পায়রা, পাখি, পালকি, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, পটচিত্র, সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ। বিশেষভাবে থাকছে তরমুজের মোটিফ—ফিলিস্তিনের প্রতীক হিসেবে, যা সংহতি প্রকাশ করবে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে।

নতুন রুট অনুযায়ী, শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, রাজু ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি হয়ে চারুকলায় এসে শেষ হবে। থাকবে ব্যান্ড, বাউল, নারী ফুটবলার, ঘোড়ার গাড়ি, রিকশা র‍্যালি ও সুসজ্জিত পুলিশ বাহিনীর ঘোড়ার দল।

শোভাযাত্রা চলাকালে বারডেম, বাংলা মোটর, আজিজ মার্কেট ও মৎস্য ভবনের রাস্তা বন্ধ থাকবে। নিরাপত্তার কারণে বন্ধ থাকবে মেট্রোর টিএসসি স্টেশন। বিকেল ৫টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ থাকবে, কেবল বের হওয়ার পথ খোলা থাকবে।

এবারের আয়োজন নিয়ে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নামে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, এবারের আয়োজন “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত”, এবং মূল ডিজাইন শিক্ষকরা করেছেন। তবে ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম শেখ এই অভিযোগকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলে দাবি করেছেন।

চারুকলা অনুষদ ১৯৮৯ সাল থেকে পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রার আয়োজন করে আসছে। প্রথমদিকে এটি ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। পরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়ে নাম হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো একে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়।

তিন দশক পর এবার ফিরে আসছে সেই পুরনো নাম—‘আনন্দ শোভাযাত্রা’।

Leave a Comment

Footer Section