বাংলাদেশি পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল ‘সি টু সামিট’ অভিযানের মাধ্যমে সফলভাবে এভারেস্ট জয় করে দেশে ফিরেছেন। ২৯ মে বিকেলে নেপাল থেকে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরপরই তিনি অংশ নেন রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। এ অনুষ্ঠানে তিনি শোনান এভারেস্ট জয়ের পথে তার অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম আর সাহসের গল্প।
শাকিল জানান, চূড়ায় ওঠার আগ পর্যন্ত তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে ভয়াবহ বিপদসংকুল পথ। তাঁবুতে রাত কাটানোর কথা বলতে গিয়ে বলেন, ঘুমানো প্রায় অসম্ভব ছিল। বরং তিনি ভাবতেন, দেশে ফিরে মানুষকে কী কী গল্প শোনাবেন। চূড়ায় উঠেই যেটুকু অনুভব করেছিলেন, সেটি ছিল শুধুই একটি—বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছি, এখন জীবিত ফিরে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পর্বতারোহণের সময় একাধিক পর্বতারোহীর মৃতদেহ দেখতে পেয়েছেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁর মনে ভীতির সঞ্চার করেছিল। তবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও তিনি হাল ছাড়েননি। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকা সত্ত্বেও ১৯ মে ভোর সাড়ে ছয়টায় বাংলাদেশ সময়, শাকিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পা রাখেন।
শাকিলের এই দুঃসাহসিক অভিযানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রাণ গ্রুপ আয়োজন করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, শাকিল শুধু একটি পর্বত জয় করেননি, জয় করেছেন বাংলাদেশের সম্মান। তাঁর এই প্রচেষ্টা আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক অসাধারণ অনুপ্রেরণা।
অনুষ্ঠানে শাকিলের মা ও তাঁকে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। তাঁর ক্লাব ‘বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব’-এর সদস্যরা, পরিব্রাজক তারেক অণু এবং স্ন্যাকস পার্টনার ‘মিস্টার নুডলস’-এর কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পরিব্রাজক তারেক অণু বলেন, শাকিলের সুস্থভাবে ফিরে আসাটাই সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। বিশেষ করে তাঁর পরিবেশ সচেতন বার্তা—‘প্লাস্টিক ফ্রি অভিযান’ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অভিযানের মধ্য দিয়ে সমাজে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়েছেন।
শাকিল তাঁর অভিযানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন অস্ট্রেলীয় পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপের ‘সি টু সামিট এক্সপেডিশন’ থেকে। ম্যাকার্টনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শুরু করে ১২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টে উঠেছিলেন। ঠিক সেই পথেই হেঁটে শাকিল শুরু করেন তাঁর যাত্রা—২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানী সৈকত থেকে। এরপর চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ হয়ে ১২ দিনে তিনি ঢাকায় পৌঁছান। এরপর সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর পেরিয়ে ২৮ মার্চ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পৌঁছান এবং সেখান থেকে ভারতে প্রবেশ করেন।
ভারতের জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং পেরিয়ে ৩১ মার্চ নেপালে প্রবেশ করেন শাকিল। এভাবে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার হেঁটে তিনি ২৯ এপ্রিল এভারেস্ট বেজক্যাম্পে পৌঁছান। এরপর অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৬ মে শুরু হয় রোটেশন ক্লাইম্ব। ক্যাম্প–৩ পর্যন্ত উঠে আবার বেজক্যাম্পে ফিরে আসেন ১০ মে। তারপর মূল অভিযানের জন্য ১৬ মে ক্যাম্প–২, ১৭ মে ক্যাম্প–৩, ১৮ মে ক্যাম্প–৪ এবং অবশেষে ১৯ মে এভারেস্ট চূড়ায় আরোহন করেন।
শাকিলের এই বিজয় শুধু তাঁর একক কীর্তি নয়, এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের একটি অধ্যায়। তাঁর মতো সাহসী ও অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষদের পদচারণায় বাংলাদেশের নাম উঠে আসুক বিশ্ব মানচিত্রে—এই প্রত্যাশা আজ দেশের প্রতিটি মানুষের।