দশকজুড়ে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টির বাইরে ছিল বিরল আর্কিওপটেরিক্স জীবাশ্ম, প্রথম বিশ্লেষণে উঠে এলো চমকে দেওয়া তথ্য

News Desk

দশকজুড়ে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টির বাইরে ছিল বিরল আর্কিওপটেরিক্স জীবাশ্ম, প্রথম বিশ্লেষণে উঠে এলো চমকে দেওয়া তথ্য. Dhakainlight.com

প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বছর আগের জীবাশ্ম, যেটি আর্কিওপটেরিক্স নামক পৃথিবীর প্রাচীনতম পাখির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন — অবশেষে বিজ্ঞানীদের হাতে এসেছে। শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরি সম্প্রতি এই জীবাশ্মটি অধিগ্রহণ করেছে এবং প্রথমবারের মতো এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে গবেষকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জীবাশ্মে পাওয়া গিয়েছে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য, যা আর্কিওপটেরিক্সের সত্যিকারের উড্ডয়ন ক্ষমতার নতুন প্রমাণ বহন করে। গবেষণাটি ২০২৫ সালের ১৪ মে প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী Nature-এ।

গবেষণায় দেখা গেছে, জীবাশ্মটিতে এমন ধরনের পালক রয়েছে — যেগুলো ‘টারশিয়াল ফেদার’ নামে পরিচিত — যেগুলো আধুনিক পাখিদের উড্ডয়নের জন্য অপরিহার্য। এই পালকগুলো প্রথমবারের মতো কোনো আর্কিওপটেরিক্স জীবাশ্মে পাওয়া গেছে।

\

নেতৃত্বদানকারী গবেষক ড. জিংমাই ও’কনর বলেন, “এটি একের পর এক ‘ওয়াও মুহূর্ত’ ছিল। এই জীবাশ্ম এতটাই নিখুঁত অবস্থায় সংরক্ষিত, যেন কোটি বছরের ইতিহাস হঠাৎ করেই খুলে গেছে।”

বেশিরভাগ আর্কিওপটেরিক্স জীবাশ্ম চ্যাপ্টা এবং অসম্পূর্ণ হলেও, এই নতুন জীবাশ্মটি তিন-মাত্রিকভাবে প্রায় সম্পূর্ণ। শুধু একটি আঙুল অনুপস্থিত। এটি ছিল একটি ব্যক্তিগত সংগ্রাহকের কাছে, ১৯৯০ সাল থেকে।

জীবাশ্ম প্রস্তুতকারক আকিকো শিনিয়া ও কনস্ট্যান্স ভ্যান বিক জীবাশ্মটি প্রস্তুত করতে প্রায় ১৬০০ ঘণ্টা ব্যয় করেন। তারা ইউভি আলো ও সিটি স্ক্যান ব্যবহার করে খনিজযুক্ত নরম টিস্যুগুলোর অবস্থান শনাক্ত করেন।

গবেষকরা আরও আবিষ্কার করেন, জীবাশ্মটির পায়ের পাতায় দেখা গেছে লম্বা আঁশযুক্ত গঠন, যা বোঝায় যে এই পাখি মাটিতে হাঁটাচলা ও খাবার সংগ্রহেও পারদর্শী ছিল — যেমনটা আমরা আধুনিক কবুতর বা ঘুঘুদের মাঝে দেখি।

এছাড়াও, এর মুখগহ্বরের হাড় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ‘ক্রেনিয়াল কিনেসিস’ নামে পরিচিত একটি গঠনগত বৈশিষ্ট্যের ইঙ্গিত, যা পাখিদের মুখের হাড় একে অপরের থেকে স্বাধীনভাবে নাড়াতে সক্ষম করে। এর ফলে তারা খাবার খেতে আরও বেশি নমনীয়তা পায়।

ড. সুসান চ্যাপম্যান, ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালেওন্টোলজি ও ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজির বিশেষজ্ঞ বলেন, “টারশিয়াল পালকের সন্ধান পাওয়া একটি অসাধারণ আবিষ্কার। এটি প্রমাণ করে যে আর্কিওপটেরিক্স সম্ভবত স্বল্প দূরত্বে সত্যিকারের উড়তে পারত।” তবে তিনি যোগ করেন, এতে আধুনিক পাখিদের মতো সম্পূর্ণ উড্ডয়নের উপযোগী বুকের পেশি বা কিল আকৃতির বুকের হাড় ছিল না।

ফিল্ড মিউজিয়ামের সভাপতি জুলিয়ান সিগার্স বলেন, “এটি আমাদের যাদুঘরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্ম সংগ্রহের একটি, সম্ভবত বিখ্যাত ডাইনোসর SUE-এর পরেই।”

এই জীবাশ্মটির আবিষ্কার ও বিশ্লেষণ বিজ্ঞানীদের মতে, পাখিদের বিবর্তনের ইতিহাসে এক অমূল্য সংযোজন। বিশেষ করে এটি প্রমাণ করে কীভাবে কিছু ডাইনোসরই পরবর্তীতে আধুনিক পাখিতে রূপান্তরিত হয়েছে — যারা আজ পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় স্থল মেরুদণ্ডী প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।

ড. ও’কনর বলেন, “এই জীবাশ্মের পুরোটাই আমরা এখনো বিশ্লেষণ করিনি। আরও অনেক কিছু জানার বাকি আছে। আমি নিশ্চিত, সামনে আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে।”


সংবাদ সংকলন ও অনুবাদ: আমার মিউজ নিউজ ডেস্ক
তথ্যসূত্র: CNN Science Report by Mindy Weisberger (May 21, 2025)

Leave a Comment

Footer Section